বৈষম্যের কারণে আমরা একদেশে দুই ধরনের সমাজ তৈরি করছি: অধ্যাপক রেহমান সোবহান

৬ষ্ঠ নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা অনুষ্ঠানে
৬ষ্ঠ নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা অনুষ্ঠানে  © টিডিসি ফটো

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, বৈষম্যের কারণে আমরা একদেশে দুই ধরনের সমাজ তৈরি করছি। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘৬ষ্ঠ নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মঞ্জুর এলাহী’ অডিটোরিয়ামে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

‘বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ’ শিরোনামে বক্তব্যে অধ্যাপক রেহমান সোবহান চারটি মোটা দাগে দেশের বৈষম্য তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- বাজার বৈষম্য; অসম সমাজ; রাজনৈতিক বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় বৈষম্য।

তার মতে, দেশের উৎপাদকরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তারা পরিশ্রম করেও ভাগ্য বদল করতে পারছেন না।

অথচ মধ্যস্বত্বভোগী কিছু মানুষ পুঁজির দাপটে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এখান থেকে ব্যাপক মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এখানে বাজার ব্যবস্থায় তথ্য, সম্পদ, ঋণ এসব ক্ষেত্রেও প্রচুর বৈষম্য রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যাপক বৈষম্য আমাদের এক দেশে দুইটা পৃথক সমাজ তৈরি করে ফেলছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা গুণগত ভালো মানের শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছেন, অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’

তিনি সংসদ সদস্যদের (এমপি) উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজনীতিতে শুধুমাত্র পয়সাওয়ালারা অংশ নিতে পারছে। সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী এবং পরে বাকিরাও ব্যবসায়ী হয়ে যান। ক্ষমতা তাদের ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবেই বাংলাদেশ ব্যবসায়ী, আমলা, সামরিক বাহিনীর সদস্য এমন কিছু গ্রুপকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। সেজন্য রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধাগুলো গরিব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেনি।

তবে অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার বক্তৃতায় কিছু আশার কথা এবং সুপারিশও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্ন দেখা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যদূর করতে বিভিন্ন সংস্কার কাজ শুরু করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য দূর করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। দেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন। ভূমিহীনদের হাতে খাস জমি তুলে দিলে দেশে উৎপাদন বাড়বে, শ্রমিকদের শিল্প কারখানায় মালিকানার অংশ দিলে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অসন্তোষ দূর হবে। 

সবশেষে তিনি জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং স্বাস্থ্য খাতের জন্য সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা করার পরামর্শ দেন। 

উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত ডক্টর আকবর আলী খানের কন্যা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্রী প্রয়াত নেহরীন খান এর স্মরণে এই বক্তৃতাটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও দেন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, অধ্যাপক ড. শামস রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের (অবঃ) অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ, এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রয়াত নেহরীন খানের স্বজনগণ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence