আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত

আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত
আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ‘ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল-ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, আর্থিক অপরাধ ও কমপ্লায়েন্স এবং ইকোনমিক পলিসি ও আর্থিক ব্যবস্থা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত  সংলাপটির আয়োজক ছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ব্র্যাক বিজনেস স্কুল।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সংলাপটির আলোচক হিসেবে ছিলেন বিভিন্ন সেক্টরের নীতিনির্ধারক, ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালস, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা। একটি প্লেনারি সেশন, চারটি প্যানেল আলোচনা ও পনেরোটি পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ও জরুরি সংস্কারের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

এই সংলাপ অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনের বিষয়বস্তু ছিল ‘অ্যাকশেনেবল ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসিস ফর অ্যান ইনক্লুসিভ, ইকুইটেবল অ্যান্ড প্রসপারাস বাংলাদেশ’।

প্লেনারি সেশনে প্রধান বক্তা ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর. এফ. হোসেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ।  

প্লেনারি সেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন মুজিবুল হক। একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একটি শীর্ষস্থানীয়  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, আর্থিক খাতের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আর্থিক খাতকে ফলপ্রসুভাবে সংস্কার করতে হলে পদ্ধতিগতভাবে এগোতে হবে যাতে দেশের প্রান্তিক মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে। তিনি জানান বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি পদচিহ্ন রেখে যেতে চান যাতে পরবর্তী সরকার এবং নীতিনির্ধারকেরা সেই পথটাকে অনুসরণ করতে পারে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জুলাই আন্দোলনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই সাহসিকতাই এই আন্দোলন সফল করেছে এবং একটি অদম্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তিনি তার বক্তব্যে ক্ষমতাসীনদের সততার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মিথ্যা পরিসংখ্যান প্রকৃত উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে সংস্কার সফল হবে না যা মানুষের জন্য হবে অত্যন্ত কষ্টের।’

তিনি তার বক্তব্যে ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, স্যার ফজলের কর্মময় জীবন আমার এবং আমাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ তার বক্তব্যে পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতাকে একটা বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন। তিনি ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির গুরুত্বের ওপর জোর দেন যা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন করতে সহায়তা করবে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোরভাবে নীতি প্রয়োগ করতে হবে। সেটা না হলে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।“

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, এই সময়ের বাংলাদেশ আমাদের সবার জন্য একটি বিশেষ উপহার এবং এর টেকসইতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আর্থিক সংস্কারকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেন যার প্রতি এখন বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই উদ্যোগ এটি প্রমাণ যে একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সংগতিপূর্ণ সংস্কার চেষ্টায় নেতৃত্ব দেবে।

সংলাপ অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনাগুলোতে আরো উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, লংকাবাংলা ফিন্যান্সের এমডি হুমাইরা আজম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ. বি. মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রাইহান এবং ইউএসএআইডি-এর  ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড গভর্নেন্স ডিরেক্টর মিখাইল  ট্রুব্লাডসহ  বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

দিনব্যাপী এই সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে নতুন নতুন সমাধান প্রস্তাব করেন। সংলাপের প্রস্তাবনাগুলো একটি স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সংলাপ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রস্তাবনাগুলো ইভেন্টের প্রকাশনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে যা তাদের মতামত সবার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিবে।


সর্বশেষ সংবাদ