কারিগরি শিক্ষা শুধু গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য নয়: শিক্ষামন্ত্রী
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ০৫:৪৬ PM , আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৭ PM
কারিগরি শিক্ষা শুধু গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য—এমন ধারণা ভুল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পৃথিবীর উন্নত শিক্ষামাধ্যমগুলো কারিগরি শিক্ষায় অধিক জোর দিয়েছে। ফলে তারা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, আগে ধারণা ছিল এটি গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু এটি ভুল ধারণা; কারিগরি শিক্ষায়ই ঠিক করে দিবে কর্মসংস্থান এবং শিক্ষায় সাফল্য। সরকার সেজন্য বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছে। আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচল এলাকার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে দেশের প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ২৪তম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষাই হবে আগামী দিনের মেগা প্রজেক্ট— এ কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি মানসম্মত শিক্ষাই পারে সভ্যতার পরিবর্তন করতে। সময়ের চাহিদা পূরণে আমরা চাই, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক তৈরি করতে। আমরা জ্ঞান, বিজ্ঞানে অগ্রসর শিক্ষার্থী তৈরি করতে চাই। সেজন্য, শিক্ষা, সহশিক্ষা এবং গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ বিনির্মানে শিক্ষায় জোর দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা শুধুমাত্র শিক্ষা কমিশনে নয়; এটি আওয়ামী লীগের ইশতেহার, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট, ৬৬’র ছয়দফা এবং পরবর্তী সব আন্দোলনে আমরা সে দর্শন পেয়েছি।
অ্যাক্রেডিয়েশন কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংস্থা দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এশিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা এটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাই না; আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের দক্ষ, যোগ্য ও সময়োপযোগী করতে চাই।
উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যে বিষয়েই শিখুক না কেন—তাকে প্রযুক্তি ও ভাষা-গত দক্ষতা অর্জন করতেই হবে; সেজন্য আমরা শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে কাজ করছি। ব্লেন্ডেড এডুকেশন, নতুন শিক্ষাক্রমসহ নানা পরিবর্তন এসব লক্ষ পূরণে কাজ করবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়েছে; এ নিয়ে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কাজ করতে হবে।
আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা এবং সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এটি এখন সময়ের দাবি, আমাদের এগিয়ে যেতে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রতিযোগিতা টিকতে হলে পরিবর্তনের আবশ্যিকতা স্বীকার করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাজ করতে হবে— যুক্ত করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোয় শিক্ষার্থীদের অধিক গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। সেজন্য দেশের চলমান শিল্পখাতগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পিএইচডি চালুর কথা চলছে। আমি মনে করি, এটি দেয়া উচিৎ; সমাজের সকলকেই গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র দায়সারা ইতিহাস পাঠ যথেষ্ট নয় জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আরও জানাতে হলে তাদের জন্য আরও বেশি পাঠ্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অতীত ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এতে তারা আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের নতুন বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতা-নির্ভর এবং সুখপাঠ্যের বিষয়গুলোয় জোর দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, নতুন শিক্ষাক্রম সফল হবে।
এ সময় ডা. দীপু মনি সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, আপনার এ অর্জনে আপনার, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অবদান রয়েছে। তাই, আপনাদের দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে; তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়াও আগামী জীবনকে সাফল্যময় করতেও আপনাদের কাজ করতে হবে। সেজন্য নতুন নতুন বিষয়গুলো শেখার প্রতি, গবেষণার প্রতি চর্চা অব্যাহত রাখার পরামর্শ জানান তিনি।
পাশ্চাত্য আমাদের উপর জোর করে অনেক কিছু চাপিয়ে দিতে চায়; আমরা ছোট মন নিয়ে সামনে এগোতে চাই না। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। তাই, মন ছোট করে এগিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। আমরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। সম্মান নিতে বাঁচতে হলে আমাদের তা করতেই হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এ সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক প্রগ্রেসের সম্মানিত ফেলো মি. মন্টেক এস আলুওয়ালিয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এনএসইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জাভেদ মুনীর আহমদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. জুনায়েদ কামাল আহমদ এবং এনএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। এ সময় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মিসেস ইয়াসমিন কামাল ও শাহরিয়ার কামাল উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এনএসইউর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ইসমাইল হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়ের ২৪ তম এই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক ও ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য ও রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে উপস্থিত থেকে শিক্ষামন্ত্রী গ্র্যাজুয়েটদের সনদ প্রদান করেন।