শীত রোমাঞ্চে কাঁপছে ক্যাম্পাস
- তানভীর আহম্মেদ
- প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২০ PM , আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪৯ PM
কুয়াশা মোড়ানো ভোরে নিরাপত্তারক্ষীর হুঁইসেল। মড়মড় শব্দ শুনে বিশেষ এই সতর্কতা! কে ঐখানে? না, কেউ না তীব্র ঠাণ্ডায় জবুথবু কুকুরটা দৌড়ে গা গরম করার চেষ্টা করছে মাত্র। গত রাতে পড়ে থাকা শুকনো পাতাগুলোর উপর পা পড়তেই এমন পরিস্থিতি। ভোরের সূর্যের মিষ্টি আলোটা কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাওয়াতেই এতো বিপত্তি। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে প্রকৃতিতে নেমেছে শীত।
রাতের অন্ধকার ফেরোতে না ফেরোতে কুয়াশার অন্ধকার। সূর্যের আলোয় আলোকিত না হতে না হতে আবার রাত। রোদ, আগুন, পোশাকের মধ্য দিয়ে শরীর গরম করার এক মধুর সংগ্রাম। কাঁপা কাঁপা শরীরে নিজ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার বেদনা, ঝিরিঝিরি শিশির বিন্দুতে গাড়ির হেডলাইটের আবছা আলো, কুয়াশার ধবল চাঁদর ভেদ করে চায়ের দোকানের টুংটাং শব্দ, নানা রকম শাক-সবজির নতুন স্বাদে, পাতা ঝরা গাছের ভিন্ন রূপ আর তার নিচে পড়ে থাকা শুকনো পাতার উপর হাঁটতে গিয়ে প্রাকৃতিক নূপুরের শব্দে, শিশিরবিন্দুতে গাঁদা, ডালিয়া, জবা, নয়নতারা, গোলাপে জমে থাকা মুক্তার অপার সৌন্দর্যে, কুয়াশা ভেদ করা সূর্যের রক্তিম আলোয় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে, মাঠ-ঘাট পেরিয়ে হলুদ সরিষার ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনে, খেজুরের কাঁচা রস আর পিঠা ফুলির স্বাদে শীত আসলেই এসে গেছে। বিয়ে, মাহফিল, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, খেলাধুলার ধুম লেগে যাওয়া শীত আবার এসেছে। বাঙালি সংস্কৃতির অনন্য নিদর্শন হয়ে মিশে থাকা শীত সত্যিই কাঁপাচ্ছে অনুভূতি।
আরও পড়ুন: ফুল ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন ডেনমার্কে
শীতের এই কাঁপন লেগেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঠিক শহর আর গ্রামের মিশ্র পরিবেশে তৈরি ক্যাম্পাসে শীত যেন মিশ্র সৌন্দর্য ঝরায়। কুয়াশার ধবল রাজ্যে ভেদ করে প্রাণগুলো ক্যাম্পাসে আসলেই গরম হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে কথার ফোরায়ার, সুবিশাল মাঠে খেলাধুলায়, মিষ্টি রোদের আড্ডা, বন্ধুত্বে, বাদাম তলায় ঝরা পাতার ফাঁকে সূর্যের মিষ্টে রোদের ছোঁয়ায়, সাংবাদিক সমিতির বারান্দা, মাঠের ছাউনিতে ধোঁয়া বের হওয়া মুখে গলা ছেড়ে গাওয়া গানে, মাঠের ধারে মুক্তা ছোঁয়া ঘাসে বসে গিটারের ঝঙ্কার, হৈ-হুল্লোড়, পরীক্ষার পড়ার ধুম, শিশর ভেজা মাঠে খালি পায়ে হাঁটার কসরত আর পিঠার দোকানে গরম পিঠার গরমে মিলে সেই শীতনামা ক্যাম্পাস।
কেউবা হেডলাইটের আবছা আলোর ভিতর থেকে ভেসে আসা হাঁকডাকে গাড়িতে চড়ে, কেউবা কুয়াশার চাদর ঢেকে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে, কেউ আবার হুডি, সোয়েটার, জ্যাকেটে কাঁপাকাঁপা শরীরে ক্যাম্পাসে এসে ফুটিয়ে তোলে শীতের ক্যাম্পাস।
অতিথি পাখির কসরত, ঝরে যাওয়া বাদাম পাতা, ভোরের গাঢ় সূর্য, শিশিরভেজা ঘাস, ফুলের পাপড়িতে টলমল করা শিশিরবিন্দু, প্রজাপতির রঙিন উড়াউড়ি, পাশের ঝোপঝাড় থেকে শিয়ালের হুক্কাহুয়া, মৌমাছির গুঞ্জন আর নুইয়ে পড়া ধানের ডগায় মোহনীয় হয়ে উঠে ৩২ একর।
শীতের এই সৌন্দর্য সত্যিই রোমাঞ্চকর। রুক্ষ-শুষ্ক শীত উষ্ণতার যে পরশ দেয় তা অবর্ণনীয়। ষড়ঋতুর এ দেশে শীতের উষ্ণতা আবারো কাঁপাচ্ছে ক্যাম্পাস।