রাজনীতির পথে নুর, সমাজসেবায় রাব্বানী

  © ফাইল ফটো

নুরুল হক নুর ও গোলাম রাব্বানী। হালের ছাত্র রাজনীতিতে আলোচিত দুই নাম। প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ শিক্ষাঙ্গণ তো বটেই, গোটা জাতীয় রাজনীতিতে সাড়া ফেলেছিল। ধারণা করা হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে যে নেতৃত্বশূণ্যতা তৈরি হয়েছে, ডাকসুর মাধ্যমে সেটা পূরণ হবে। প্রাণ পাবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ ছাত্র সংসদগুলো। তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ হবে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে।

আপাতদৃষ্টিতে সেই আশায় ছাই পড়েছে। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ডাকসু নির্বাচন হওয়াই যেন দায়! ইতোমধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ-উদ্যোগ দেখা যায়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও বলেছেন, শুধু আমরা চাইলেই ডাকসু নির্বাচন হবে না। এখানে জাতীয় পর্যায়ের অনেক বিষয় জড়িত থাকে। পরবর্তী নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি। যদিও আশ্বাস দিয়েছেন, অন্য সব কিছুর মত ডাকসুও নিয়ম মেনে হবে।

তবে এতকিছুর পরও নতুন খবর হলো— হাজার হাজার ছাত্রের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। অন্যদিকে তরুণদের নিয়ে সমাজ গঠনে মন দিয়েছেন জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মূলত নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই উভয়েই তাদের পথ আলাদা করে নিয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত প্ল্যাটফর্মের শুরু থেকে অম্ল-মধুর সম্পর্ক ছিল নুর-রাব্বানীর। এরপর দিন যত গড়িয়েছে, সম্পর্কের দেয়ালে ততই ফাটল ধরেছে। পরবর্তীতে ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে দুজন শীর্ষ পদ দুটোয় আসীন হলে সম্পর্কের তিক্ততা আরো বাড়তে থাকে।

যদিও ডাকসু নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দুজনের পথই এখন আলাদা। চায়ের টেবিল তো নয়-ই, টকশো-আলোচনা সভাতেও একসঙ্গে দেখা যায় না দুজনকে। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ কারো কাজ নিয়ে মাথা ঘামাতেও রাজি নয়। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালেও বিষয়টা স্পষ্ট হয়েছে। সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, ‘আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। কারো কাজের সঙ্গে নিজের কাজ মেলাতে চাই না।’ অন্যদিকে নুরের বক্তব্য হলো, দল গঠন, তার নিবন্ধন সর্বোপরি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তাও রয়েছে তার। মূলত এসব কাজেই সময় ব্যয় করছেন নুর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়ার পর থেকে ডাকসুকে ঘিরে নিজের গণ্ডি সাজিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। করোনাকালে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় থেকেছেন, এখনও আছেন। শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরসহ অভুক্ত প্রাণীদের খাওয়ানো থেকে শুরু করে অসহায় মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যা কবলিত মানুষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে সহযোগিতা করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাব্বানী। সর্বশেষ টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি) নামে একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলে সময় ব্যয় করছেন আলোচিত এই ছাত্রনেতা।

নিজের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয় গোলাম রাব্বানীর। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজনীতিবিদদের মূল কাজ হলো জনগণের সেবা করা। সে দৃষ্টিকোন থেকে টিপিবি গঠন করেছি। এখানে সবাই মিলে সমাজের সব সমস্যা দূর করে মানুষের জন্য কাজ করব।’

রাব্বানী বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের ছেলে। আমার মূল লক্ষ্য, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেখানে চাইবেন, আমি সেখানেই কাজ করতে চাই। আওয়ামী লীগই আমার মূল ঠিকানা।’ তিনি আরো বলেন, টিপিবি গঠনের পর আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গা হলো— অনেকেই আমাদের কাছে নানাভাবে সহযোগিতা চাচ্ছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আগামীতে এটি আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানুষকে যাতে আরও বেশি সহযোগিতা করা যায়, সেই চেষ্টাই সব সময় করে যাব।

অপরদিকে নুরুল হক নুর এখন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মী ও তরুণদের নিয়ে নতুন দল গঠনের। নুর বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করছি। সংগঠন গোছাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সুতরাং সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। এখন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেও নির্বাচন কমিশন কাউকে নিবন্ধন না দেয়ার জন্য আইন করছে। যদিও আমরা ডালপালা নিয়ে ভাবতে চাই না। আমরা রুট নিয়ে কাজ করতে চাই।

নুর আরো বলেন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের লক্ষ্য, তরুণদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্যবাদের সমাজ বিনির্মাণ করা। সেই সঙ্গে দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি আইনে শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমি, আমরা সেসব নিয়েই কাজ করছি।

ডাকসুর সাবেক এক সহ-সভাপতি ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, ‘‘জাতীয় রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার যে অভাব বর্তমানে চলছে, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা থেকে বেরিয়ে আসবে।’ দীর্ঘ ২৮ বছর পর সচল হওয়া ডাকসুর মাধ্যমে সত্যিই কি তাই হয়েছে? সেই উত্তর— সময়ের কাছে। এখন দেখার বিষয়, পথ আলাদা হয়ে যাওয়া জনপ্রিয় দুই ছাত্রনেতা গোলাম রাব্বানী ও নুরুল হক নুর তরুণদের প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পারেন?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence