সন্দ্বীপে বিএনপির নেতৃত্বে উদীয়মান মুখ ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০২ AM , আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০২ AM
চট্টগ্রামের রাজপথের আন্দোলনে আপোসহীন নেতা হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কঠিন সময়টিতে সামনের সারির নেতাদের একজন ছিলেন। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৩৬টি মামলা, একাধিকবার কারাবাস এবং টানা ১৭ বছরের ঘরছাড়া জীবনের পরও আন্দোলন ও রাজনীতি থেকে সরে যাননি তিনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলে সন্দ্বীপে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে।
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই লড়াকু মুখ হিসেবে পরিচিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। গ্রেপ্তার, কারাবাস, ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় রিমান্ডসহ বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। রাজনৈতিক হয়রানির অংশ হিসেবে ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা দেওয়া হয় বিভিন্ন থানায়।
২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার মালিকদের বিরুদ্ধে তিনি একশ কোটি টাকার মানহানির মামলাও করেছিলেন।
স্থানীয়দের ভাষায়, সন্দ্বীপ ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উরিরচরে সফরে তিনি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা–স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় সংযোগ বিষয়ক সমস্যাগুলো উল্লেখ করে সমাধানের স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরতেন। তাদের মতে, ‘এই নেতা শুধু স্বপ্ন দেখান না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনাও দেন।’
নিজ এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একটি আধুনিক, সবুজ, মাদকমুক্ত ও অস্ত্রমুক্ত আলোকিত সোনার দ্বীপ সন্দ্বীপ। নৌ–যোগাযোগ আধুনিক করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, ১০০৪ বর্গমাইল জেগে ওঠা দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানই আমার অঙ্গীকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ঘোষিত নৌবন্দর বাস্তবায়ন, মালদ্বীপের আদলে পর্যটন নগরী গড়ে তোলা, শিল্পনগরী স্থাপন, টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বিদেশে কর্মরত সন্দ্বীপবাসীর পাসপোর্ট নবায়নে অগ্রাধিকার, নৌ–পারাপারে আলাদা লাইনসহ সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান আমার পরিকল্পনায় রয়েছে—যদি দল আমাকে দায়িত্ব দেয়।’
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামের কাইছের গো নতুন বাড়ির মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত ১৯৭৭ সালে এসএসসি, ১৯৭৯ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন।
তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ছাত্রদল থেকে। ১৯৮৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পলিটেকনিকের নির্বাচিত জিএস ছিলেন। এরপর তিনি বিএনপি সন্দ্বীপ উপজেলার সহসভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমানে সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর সদস্য ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পান সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থাকা অবস্থায় দল তাকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়।
ফ্যাসিবাদের আমলে তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে প্রথম দুটি মামলা হয়। এরপর ২০১২ সালে ২টি, ২০১৩ সালে ৪টি, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৭ সালে ৩টি, ২০১৮ সালে ১১টি, ২০১৯ সালে ৩টি এবং ২০২০ সালে ৫টি মামলা হয়। এসব মামলায় তিনি বহুবার গ্রেপ্তার, কারাবন্দিত্ব ও রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হন। রাজনীতির কারণে দীর্ঘ বছর পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে তাকে।