জুলাই সনদের দরকার নেই : মেজর হাফিজ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৩ PM
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, আমাদের জুলাই সনদের প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি জাতীয় সংসদ প্রয়োজন।
আজ শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা দলের এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ।
মেজর হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের ভুলিয়ে দিতে এ অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে হ্রাস করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে, যা অন্য কোনো আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এই দেশের জন্মই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।
হুঁশিয়ারি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মেজর হাফিজ বলেন, আজ ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা প্রতিহত করা হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিএনপি অনেক কিছু মেনে নিয়েছে জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, তা নিয়ে সনদ হবে। আমরা ডিসেন্ট দেখতে চাই না। এখন প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন, এবং ক্ষমতায় আসলে বিএনপি যৌক্তিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন জোর করে সনদে ঢুকিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন হওয়ার স্বার্থে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিএনপি অনেক কিছু মেনে নিয়েছে।
হাফিজ অভিযোগ করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া বা বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস খোলার প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, আপনারা প্রতিটি প্রদেশে অফিস নেন, রেজিস্ট্রেশন নেন, ভারতে মিশে যান। বাংলাদেশে আপনাদের প্রয়োজন নেই।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, একাত্তরকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। অনেকে ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই ভয়ে বর্তমান সরকারও ভোট দিতে চায় না।
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত বিএনপির কাঁধে ভর করলেও কোনো আন্দোলনে অংশ নেয়নি বরং আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২৮ অক্টোবর বিএনপির ওপর গুলি চালানো হয়েছে, অথচ জামায়াত নির্বিঘ্নে সমাবেশ করছে। তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিতে ভয় পায়।
সালাম বলেন, বিএনপি দেশের স্বার্থে বহুকিছু ছাড় দিয়েছে। কিন্তু এখন তাদেরই বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির খেলেন, মন্ত্রী হলেন, টাকা কামালেন, এখন বিএনপির বিরুদ্ধে চলে গেলেন-এটিই ষড়যন্ত্র। জামায়াত সবসময় বেঈমানি করেছে। যারা বোধশক্তি রাখে, তারা খালেদা জিয়ার কাছে যেতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দেশ বর্তমানে বহুরূপীদের খপ্পরে পড়েছে। এখন বিএনপির করণীয় হলো ধৈর্য ধরে সময়ের অপেক্ষা করা।
পতিত সরকারের কাছ থেকেও জামায়াত সুবিধা পেয়েছিল বলে মন্তব্য করে আলাল বলেন, জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতা একসময় জাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিল, গলাকাটা পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ৫ আগস্টের পর থেকে শিবিরের অনেক সদস্য ছাত্রলীগের ভেতর থেকে বের হয়েছে, আর এখন তারা বলছে-তারা প্রকাশ্যেই ছিল।
আলাল আরও বলেন, জামায়াত এখন রূপ বদলাতে শুরু করেছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে সমাবেশ করছে, যাতে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কারণ বিএনপি এখন এমন এক অর্জুন গাছের ছালের মতো; যার যখন প্রয়োজন কেটে নিয়ে যায়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আহ্বানও জানান বিএনপির এই নেতা।