গণভোটে পিআর পদ্ধতি চাই: গোলাম পরওয়ার

রাজধানীতে জামায়াতের গণমিছিল
রাজধানীতে জামায়াতের গণমিছিল  © সংগৃহীত

পিআর নিয়ে জাতির রায় আমরা গ্রহণ করব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, জাতি যদি পিআরের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে সব দলকে তা মানতে হবে। আর জাতি না মানলে সে রায় আমরাও গ্রহণ করব। জুলাই সনদকে আইনী ভিত্তি দিতে গণভোট এবং সেখানে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে উপেক্ষা করা যাবে না। 

আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর জনগণ বোঝে না-এমন প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতার প্রতি আস্থা রেখে বলতে চাই,  একদিকে আপনি যেমন সরকারের প্রধান, অন্যদিকে আপনি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রধান। দুটি প্রধান দায়িত্ব নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আপনার চারিদিকে যে সমস্ত কিছু উপদেষ্টাগণ আছেন, মাঝে মাঝে অন্য দিকে আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) ঠেলে দিয়ে কোনো একটি বিশেষ দলের প্রতি তাদের আনুগত্য পোষণ করানোর চেষ্টা করছেন। আমরা এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না।

আরও পড়ুন: জামায়াত আমীরের ফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে এমপি প্রার্থী হলেন ড. হাফিজুর

এই জামায়াত নেতা বলেন, আমাদের যে ৫ দফার দাবিগুলো, সেগুলোর ভিত্তিতে গণভোট দিতে হবে এবং তার মধ্যে পিআরের প্রস্তুাবটিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মিয়া গোলাম পওয়ার বলেন, আমরা বলেছি, আপনি গণভোট দিয়ে দেন। পিআর এর পক্ষে জনগণ কী মতামত দেয় (দেখেন)। জনগণ যদি পিআর এর পক্ষে মত দেয়, তা সব দলকে মানতে হবে। যদি অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতি না চান, তাহলে জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেবে। কিন্তু জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে উপেক্ষা করা যাবে না।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাবগুলো সমন্বিত করে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামাসহ জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মতভেদ ছিল। 

জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল। 

শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে সেই গণভোট কবে, কীভাবে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। এর মধ্যেই ১৫ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে জামায়াতসহ কয়েকটি দল জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোট, জুলাই সনদের আইনী ভিত্তিসহ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, ইতিপূর্বে আমরা বিভিন্ন সার্ভের ভেতর দিয়ে দেখতে পেয়েছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে এই গণমিছিল হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট, পল্টন হয়ে মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা উত্তর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ সেলিমুদ্দিনের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তিসহ ৫ দফা দাবিতে গণমিছিলের কর্মসূচি শুরু হয়।

প্রসঙ্গত: ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে জামায়াতের এই গণমিছিল হচ্ছে। রবিবার এসব দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। জামায়াতের পাঁচ দফা দাবি হল–জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন; সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।


সর্বশেষ সংবাদ