গোপালগঞ্জে হামলা: এখন পর্যন্ত যা যা হলো
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৫:০২ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৯ PM
জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জ। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন। হামলা হয় এনসিপির সমাবেশেও। বর্তমানে পুলিশ-সেনাবাহিনী মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকা পড়েছেন নাহিদ-সারজিস-হাসনাতরা।
যৌথবাহিনীর নিরাপত্তায় বের হচ্ছে এনসিপির গাড়ি বহর
গোপালগঞ্জের সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে হামলার মুখে পড়ার পর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। আজ বুধবার তিনটার দিকে এ ঘটনার পর সেখানে আশ্রয় নেন তারা। পরে বেলা ৫টার দিকে এসপি অফিস তাদের গাড়িবহর বের হতে দেখা যায়। এসময় তাদের গাড়ির বহরের সামনে ও পেছনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গাড়ি ছিল।
শিবির সভাপতির স্ট্যাটাস
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনা প্রমাণ করে ফ্যাসিবাদ এখনো নির্মূল হয়নি। আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের ওপর হামলা কখনোই মেনে নিব না। আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।
এনসিপির ওপর হামলা নিয়ে কড়া বার্তা নুরের
এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘সারা দেশের লীগের দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা গোপালগঞ্জে আস্তানা গেড়েছে। এনসিপির সমাবেশ ও যাত্রাপথে আজকের হামলা প্রমাণ করে ১১ মাসেও এদের মধ্যে ন্যূনতম কোন অনুশোচনাবোধ তৈরি হয়নি। বরং এরা প্রতিশোধপরায়ণ হিংস্র জন্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই কথা পরিষ্কার, ফ্যাসিস্ট লীগের প্রশ্নে আর কোন ছাড় নয়। বিপ্লব ও বিপ্লবীদের সুরক্ষায় ফ্যাসিস্টদের নির্মূল করতেই হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রশাসন যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জকে দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী লীগ মুক্ত করার কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে আমরা গোপালগঞ্জকে দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্ত করতে ‘ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ মার্চ’ করবো।গোপালগঞ্জবাসীর প্রতিও আমাদের আহ্বান ফ্যাসিবাদ নির্মূল আপনারাও আওয়াজ তুলুন, পুরো বাংলাদেশ আপনাদের পাশে থাকবে।’
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালাচ্ছে: আখতার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। এনসিপি’র ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার পর দলের নেতারা ‘একটি ভবনে’ নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বেলা সাড়ে ৪টার দিকে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে ফিরে আসার সময় সড়ক অবরোধ করে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিন বিকেল ৪টা ৪৯ মিনিটের দিকে গুলি বর্ষণ শুরু করে।
আটকা হাসনাত-সারজিসরা
গোপালগঞ্জের সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে হামলার মুখে পড়ার পর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের। এই মুহূর্তে সেখানেই আটকে রয়েছেন তারা।
গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি
এনসিপির গাড়ি বহরে হামলার পর পুরো গোপালগঞ্জ জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান ১৪৪ ধারা জারি করেন।
এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হামলাকারী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে আছেন। বুধবার দুপুর আড়াইটার পরে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
মির্জা ফখরুলের বিবৃতি
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়ে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল, মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশ আবারও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হুমকির মুখে পড়বে।
যা বললেন নাহিদ
সমাবেশ শুরুর পর এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমরা গোপালগঞ্জের নাম বদলাতে আসিনি আজকে গোপালগঞ্জে যে হামলা হয়েছে তার বিচার যদি না হয় তাহলে আমরা আবার আসেবা। নিজ হাতে মুজিববাদ মুক্ত করবো।’
হামলা-ভাঙচুরের পর এনসিপির সমাবেশ
সমাবেশস্থলে হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় এনসিপির নেতা-কর্মীরা এক হয়ে পুলিশসহ ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বেলা সোয়া দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে শহরের পৌর পার্কে স্থানীয় ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এই হামলা চালান। তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানা গেছে।
ইএনওর গাড়িতে হামলা
পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর এবার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের সদর উপজেলার কংশুরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের গাড়িতে আগুন
এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদরেসকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন—গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) আহমেদ বিশ্বাস, কনস্টেবল কাওছার ও মিনহাজ।
জামায়াতের আমিরের স্ট্যাটাস
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনার পর ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যতদূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিক নিয়মে সর্বপর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব থেকেই আলাপ-আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছেন। এটি তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, কার্যত মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অতি দ্রুত সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ইতিহাসের পূর্ণ দায় সরকারের ওপরেই বর্তাবে।’