সাবেক এমপির বিলাসবহুল গাড়িটি কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন বিএনপির সাবেক নেতা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১০:২৪ AM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:৩২ AM
কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং এলাকা থেকে গত সোমবার (৯ জুন) একটি বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। প্রায় তিন মাস ধরে ভবনের সাফিনা টাওয়ারের বেসমেন্টে রাখা ছিল গাড়িটি। জানা গেছে, গাড়িটি সেখানে এনে রেখেছিলেন বিএনপির সাবেক এক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বর্তমানে একটি তামাক কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মাঝে মাঝে তার গাড়িচালক গাড়িটির ইঞ্জিন চালু করে পরীক্ষা করতেন, তবে গাড়িটি আর বাইরে নেওয়া হয়নি।
মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। বিএনপি সরকারের আমলে তিনি গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে কুষ্টিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সাফিনা টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালক এবং পুলিশের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় সাফিনা টাওয়ারে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আশিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। আশিকুর জানান, গত বছরের ১ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান ভবনের তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন এবং দুটি গ্যারেজ জায়গাও চুক্তিতে নেন। একটি গ্যারেজে কোম্পানির আরেকটি গাড়ি থাকত, আর জব্দ হওয়া প্রাডো গাড়িটি ৭ নম্বর গ্যারেজে এনে রাখা হয় প্রায় তিন মাস আগে।
তিনি আরও বলেন, গাড়িটি কখনো বাইরে বের হয়নি, তবে চালক শান্ত মাঝে মাঝে এসে ইঞ্জিন চালু করে রাখতেন। মোস্তাফিজুর ও তার পরিবার ২০ দিন আগে ভবন ছেড়ে চলে গেছেন।
গত সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সাফিনা টাওয়ারের পার্কিং থেকে গাড়িটি জব্দ করে পুলিশ। গাড়ির ভেতর থেকে পাওয়া একটি কাগজে গাড়ির নম্বর, ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বরসহ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ওরফে আনারের নাম হাতে লেখা ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ফয়সাল মাহমুদ জানান, গাড়িটি প্রথমে ভবনমালিকের জিম্মায় রাখা হয়েছিল, পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়। গাড়িটির প্রকৃত মালিকানা যাচাইয়ে বিআরটিএ-র সহায়তা নেওয়া হচ্ছে, তবে ছুটির কারণে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিকে আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন জানান, গাড়ির নম্বর দেখে নিশ্চিত হয়েছেন এটি তার বাবার। তিনি বলেন, ভারতের কলকাতায় তার বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর গাড়ির হদিস আর তারা পাননি। গাড়িটি উদ্ধারের জন্য তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমান ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি’ নামের একটি তামাক কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক। কোম্পানিটির আগের নাম ছিল ‘তারা টোব্যাকো’। ৫ আগস্টের পর কোম্পানির নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হলেও ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোম্পানির পুরোনো কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন সবকিছু দেখভাল করেন।
তামাক কোম্পানির গাড়িচালক শান্ত বলেন, আগে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালাতেন। বর্তমানে তিনি কোম্পানির জিএম বিল্লাল ও সিইও জাহিদের গাড়ি চালান। তাদের নির্দেশেই তিনি জব্দ হওয়া গাড়িটি মাঝে মাঝে চালু করতেন। গাড়ির প্রকৃত মালিক কে, তা তার জানা নেই বলে জানান।
সাফিনা টাওয়ারে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্রে মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া ফোন নম্বরেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কল ধরেন এস এম সালেহ বিন উৎস নামের একজন, যিনি নিজেকে কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, এক মাস আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছেন এবং ভাড়ার মেয়াদ বাড়ানোর সময় তার নম্বর চুক্তিপত্রে দেওয়া হয়। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের ফোন নম্বর তিনি দিতে পারেননি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগের আশ্বাস দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মেহেরপুরের গাংনীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমান একসময় স্থানীয় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরে রাজনীতি থেকে সরে এসে কুষ্টিয়ায় ব্যবসা শুরু করেন। গাংনীতে ৫ আগস্টের পর তিনি কয়েকবার গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, মোস্তাফিজ একসময় গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা সহসভাপতি ছিলেন। এখন তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন এবং তামাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে তার জানা।
বিলাসবহুল এই গাড়ি জব্দের পর এলাকা ও রাজনীতির অঙ্গনে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে মোস্তাফিজের পরিবারের একজন সদস্য এই গাড়িতে করে এলাকায় এসেছিলেন।