মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করলো এনসিপি

এনসিপি
এনসিপি  © সংগৃহীত

রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, সংবিধান ও সাংবিধানিক কাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। দলটি জানিয়েছে, এই `মৌলিক সংস্কার' শুধু নির্বাচনী সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব।

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) এনসিপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বার্তায় এই রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এতে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচন কমিশন সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন সংস্কার।

এনসিপি বলেছে, শাসনব্যবস্থায় স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা রোধ, দলীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক ক্ষমতায়নের জন্য এ ধরনের সংস্কার অপরিহার্য।

প্রস্তাবে বলা হয়, গণতান্ত্রিক রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভোট ও মতামতের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী উপাদান বিলুপ্ত করতে হবে। এতে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন সংস্থা এবং মহাহিসাব নিরীক্ষককে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সাংবিধানিক সুরক্ষা ও সংশোধন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণের সম্মতি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন না করার সুপারিশ করা হয়।

প্রস্তাবনায় মৌলিক সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো—সাংবিধানিক কাঠামো সংস্কার, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার, দুদক, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন সংস্কার।

সংগঠনটির মতে, এই সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো শাসনব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, বিকেন্দ্রীকৃত ও অংশগ্রহণমূলক করা, দলীয় প্রভাব হ্রাস করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের নৈতিকতা বজায় রাখা, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা চালু করা এবং তরুণ ও নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

নির্বাহী বিভাগে জবাবদিহিতা আনতে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আসনভিত্তিক নিম্নকক্ষ এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের নিশ্চয়তা এবং সরকারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উপযুক্ত সাংবিধানিক ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়।

নতুন প্রস্তাবিত নীতিমালায় ভোটার বয়স ১৬ বছর এবং প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব, তথ্য অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ নারী আসন সংরক্ষণ, গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোট বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়। 

দমনমূলক আইন সংস্কারে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, সংবিধানের ৩৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন: আটকের কারণ জানানো, আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত সংস্কার, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, প্রধানমন্ত্রী, দলনেতা ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারবেন না এবং বিরোধী দল ছায়া কেবিনেট গঠন করবে, যারা সরকারের কাজ পর্যবেক্ষণ, সমালোচনা ও বিকল্প প্রস্তাব দেবে। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (যেমন পরিকল্পনা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র) প্রধান বিরোধী দল থেকে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

বিচার বিভাগ ও দুদক সংস্কারে নিজস্ব প্রশাসনিক সচিবালয় ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন, প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ, বিচারপতি নিয়োগে জুডিশিয়াল কমিশন ও মেধাভিত্তিক পরীক্ষা, দুদকের ৩২(ক) ধারা বাতিল করে তাদের স্বাধীনভাবে সরকারি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত ও গ্রেপ্তারের অধিকার প্রদান করার কথা উল্লেখ্য করা হয়। 

স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন সংস্কারের বিষয়ে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন বাতিল, "স্থানীয় শাসন" নয়, "স্থানীয় সরকার" প্রতিষ্ঠা, রাইট টু রিকল ব্যবস্থা চালু, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর রাজনৈতিক চাপ থেকে সুরক্ষা, কাজের সময়সীমা নির্ধারণ, এবং পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। 

নির্বাচন সম্পর্কিত অতিরিক্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা,ভোট কেনা-বেচা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা, গেজেট প্রকাশের পর অনিয়মের প্রমাণ মিললে ফলাফল বাতিলের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!