স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় নেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানী, সমালোচনার ঝড় 

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (অব:)
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (অব:)  © সংগৃহীত

সপ্তাহ খানেক আগে জানানো হয়েছিল, জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে ৮জন গুণীকে। তারপর তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছিল। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম তালিকায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর নাম। আজ প্রকাশিত তালিকায় নেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (অব:) নাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তালিকায় দেখে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।

তবে সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৫ সালে ১ জন ব্যক্তিকে জাতীয় জীবনে তার অসাধারণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার সম্মাননায় ভূষিত করা হয়; তাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। সেই ব্যক্তি হলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (অব:)। এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের প্রথম তালিকায় ভুল করে তার নাম এসেছিল। এজন্য প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর নাম।

আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ তালিকায় ৭ গুণীর নাম স্থান পেয়েছে। এতে বাদ পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানী।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর) এবারের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।

অনেকে বলছেন, তালিকা প্রকাশ করার আগেই ভালো করে যাচাই-বাছাই করা উচিৎ। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের তালিকা প্রণয়ন ও তা ঘোষণার মানদন্ড আছে। ইচ্ছে করে নাম ঢুকালাম, তারপর বাদ দিলাম, এভাবে তো হয় না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাধীনতা পুরস্কার বিতর্কিত করার জন্য সমালোচনা করেছেন অনেকেই। সাংবাদিক জ ই মামুন তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘জেনারেল ওসমানী কি দোষ করলেন?’

সাংবাদিক জ ই মামুন আরও লিখেছেন, ‘গত ৬ মার্চ সরকার জানিয়েছিল, এবার স্বাধীনতা পদক ২০২৫ পেতে যাচ্ছেন মোট ৮ জন। (যার ৭ জনই মরণোত্তর এবং একমাত্র জীবিত ব্যক্তি বদরুদ্দীন উমর পুরস্কার নেবেন না জানানোর পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হাহা হিহি হয়েছিল) তালিকায় সবার আগে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নাম। পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু আজ দেখি স্বাধীনতা পদকের তালিকা থেকে জেনারেল ওসমানীকে বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুঝলাম না কার ইশারায় বা নির্দেশে কোন অপরাধে জেনারেল ওসমানী পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ গেলেন! ভাগ্যিস ভদ্রলোক দুনিয়াতে নেই, ভাবুন, বেঁচে থাকলে ব‍্যাপারটা তাঁর জন‍্য কি বিরাট অসম্মানের হতো!’

জ ই মামুন আরও লিখেছেন, ‘তবে, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে তার স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে দিয়েছে ইউনূস সরকার। ২০০৩ সালে বিএনপি- জামায়েত জোট সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা পদক দেয়। পরে ২০১৬ সালে আদালতের এক রায়ের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক বাতিল করে। আজ অন্তর্বর্তী সরকার সেই বাতিলের আদেশ রহিত করায় পদক ফিরে পেলেন জেনারেল জিয়া।’

লেখক ও গবেষক রাজু নূরুল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘গত সপ্তাহে স্বাধীনতা পদকের জন্য যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই তালিকায় জেনারেল ওসমানী ছিলেন এক নম্বরে! পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছিল। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদও জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে তার নাম উধাও। এই সরকারের আমলে কেন ও কার ইশারায় তালিকায় নাম ঢুকে এবং ঘোষণার পর সেটা আবার বাতিলও হয়ে যায়, সে এক রহস্য বটে! একুশে পদক নিয়েও এরা একই কাজ করেছে। ভাগ্যিস, জেনারেল ওসমানী বেঁচে নেই। এমন অসম্মান দেখতে হলো না তাকে। তবে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’


সর্বশেষ সংবাদ