টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট’
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৯ AM , আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:১৮ AM
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশকর্মী। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, সংক্ষেপে ‘বেলা’র প্রধান নির্বাহী। পরিবেশবিরোধীদের বিরুদ্ধে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই করে আসছেন তিনি। ১৯৬৮ সালের আজকের এই দিনে সফল এ নারীর জন্ম। শুভ জন্মদিন সৈয়দা রিজওয়ানা
রিজওয়ানা হাসানের পৈত্রিক নিবাস হবিগঞ্জ, যদিও তিনি জন্মগ্রহন করেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান, মা সুরাইয়া হাসান। দুই ভাইবোন এর মধ্যে তিনি ছোট। বাবা ছিলেন আইনজীবী। অনেক দিন আইন প্র্যাকটিস করেছেন। তারপরে ব্যবসা এবং রাজনীতি করেছেন। সৈয়দ মহিবুল হাসান জীবনে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন। দু’বারই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে একবার মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছেন, আরেকবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁরই সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন সন্তানের জননী তিনি। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান।
১৯৯৭ সালে বেলার প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন ফারুকের অকাল প্রয়াণের পর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি- বেলা’র হাল ধরেন রিজওয়ানা। এ ক্ষেত্রে ‘কমনওয়েলথ বৃত্তি’র সুযোগ হাতছাড়া করে লড়াই শুরু করেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এর এক দশকের মাথায় ২০০৩ সালে তার নেতৃত্বে বেলা অর্জন করে জাতিসংঘের অভিজাত স্বীকৃতি ‘গ্লোবাল রোল অব অনার’। ২০০৭ সালে তিনি লাভ করলেন জাতীয় পরিবেশ পদক। ২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পেলেন পরিবেশের নোবেলখ্যাত ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’। সে বছরই টাইম ম্যাগাজিন তাকে ভূষিত করে অন্যতম ‘হিরোজ অব দ্য এনভায়নমেন্ট’ হিসেবে। ২০১২ সালে পেলেন এশিয়ার নোবেল ‘র্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড’। এসব তার কাজেরই স্বীকৃতিমাত্র।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা পুরান ঢাকায় অন্যায়ভাবে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন। বেলা’র মাধ্যমে জনস্বার্থে আদালতে মামলা করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তৈরি করলেন একটি মাইলফলক। আদালত এই কাজকে জনস্বার্থের বিপরীত বলে রায় দেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এজাতীয় কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়। এরপর তিনি জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন। তিনি বেলা’র মাধ্যমে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তাহীনতা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাহীনতা, এ শিল্প থেকে যথেচ্চ বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে। এরপর শ্রমিকদের অধিকার আদায়, বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধে করেছেন আরো তিনটি মামলা। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসেই আদালতের রায়ে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ ছাড়া জাহাজ ভাঙার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
এছাড়াও জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, পলিথিনের যথেচ্চ ব্যবহার, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, চিংডির ঘের, সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যেখানেই পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই তিনি এবং তাঁর নেতৃত্বে বেলা, পরিবেশ রক্ষায় আইনীভাবে এগিয়ে এসেছে। তিনি বেলার প্রধান নির্বাহী ছাড়াও ফেডারেশন অফ এনজিওস ইন বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি, এনজিও এরডিআরএস-এর সভাপতি। এছাড়া তিনি ‘নিজেরা করি’ সংগঠন ও এসোসিয়েশন অফ ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভলপমেন্ট-এর একজন সদস্য। বেসরকারি এসব কাজ ছাড়াও তিনি সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ ইন্টারন্যাশনাল-এর নির্বাহী সদস্য; এনভায়রনমেন্টাল ল' এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল’ কমিশন অফ দ্যা আইইউসিএন-এর সদস্য। এছাড়া তিনি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অফ এনভায়রনমেন্টাল এক্টিভিস্ট (SAANS)-এ। [উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট অবলম্বনে]