২ বছর পর পড়ালেখায় ফিরল গাজার ৩ লাখ শিশু

গাজার শিশু
গাজার শিশু  © সংগৃহীত

টানা দুই বছর ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজাবাসীদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নজিরবিহীন, নিরবচ্ছিন্ন হামলার মুখে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার মতো নিত্যদিনের কাজও অনেক ঝামেলাপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু হয়েছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, শনিবার থেকে গাজার তিন লাখ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আবারও ক্লাসে যাওয়া শুরু করেছে।

আজ সোমবার তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর। 

সংস্থাটি আরও উল্লেখ করে, যুদ্ধবিরতি চালু হলেও এখনো ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় লাখো ডলার মুল্যের ত্রাণ সামগ্রীর ওপর ধূলা জমছে।

ইউএনআরডব্লিউএ'র গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা বলেন, সংস্থাটি 'তিন লাখ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে এবং এই সংখ্যাটি সম্ভবত আরও বাড়বে।'

তিনি জানান, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস করবে আর বাকিদের ক্ষেত্রে দূরবীক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।

'দুই বছর ধরে ওরা স্কুলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এর আগেও করোনার কারণে দুই বছরে স্কুল বন্ধ ছিল', যোগ করেন তিনি।

ওই প্রকল্পে আট হাজার শিক্ষক অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন আবু হাসনা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ওই হামলায় ইসরায়েল এক হাজার ২০০ ব্যক্তি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু হয়। ওই হামলার জেরে ৮ অক্টোবর থেকে গাজার সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে, ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুল ও সরকারি স্কুলগুলোকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়।

যেকোনো সংঘাতে স্কুল ভবনকে 'সুরক্ষা' দেওয়ার নীতি থাকলেও ইসরায়েল এতে পাত্তা দেয়নি। বিমান হামলায় অসংখ্য স্কুল ভবন ধ্বংস হয়েছে। বাকিগুলোও বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে।

ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী (১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত), ইসরায়েল ১৭২টি সরকারি স্কুল ধ্বংস করেছে। আরও ১১৮টি স্কুল বোমা হামলায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। জাতিসংঘ পরিচালিত ১০০টিরও বেশি স্কুলে হামলা হয়েছে। 

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭১১ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং আরও ২৫ হাজার ৮৯৭ জন আহত হয়েছে।

পাশাপাশি, শিক্ষা খাত-সংশ্লিষ্ট ৭৬৩ কর্মী নিহত ও তিন হাজার ১৮৯ জন আহত হয়েছেন।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া পরিকল্পনা মেনে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এই চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিরা মুক্তি পান।

গাজার পুনর্গঠন ও হামাস-বর্জিত প্রশাসন চালু করাও এই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও পুরুষ। গাজার বেশিরভাগ অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ