তেলের বিনিময়ে অস্ত্র

শব্দের গতির ৪ গুন বেশি, সক্ষম দুইশ’ কিমির দূরত্বের বিমান-ড্রোন-মিসাইল প্রতিরোধে

বেইজিংয়ে চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কুচকাওয়াজে এইচকিউ-৯ এর পোর্টেবল লঞ্চার
বেইজিংয়ে চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কুচকাওয়াজে এইচকিউ-৯ এর পোর্টেবল লঞ্চার  © সংগৃহীত

ইসরায়েলের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরপরই চীনের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এইচকিউ-৯ (HQ-9) সংগ্রহ করেছে ইরান। যুদ্ধবিরতির সুযোগেই বেইজিং থেকে এই মিসাইল সিস্টেম সরাসরি তেহরানে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই। সোমবার (৭ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আই জানায়, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির পরই এই অস্ত্র সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ইরান চীনকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল দেওয়ার বিনিময়ে এই মিসাইল সিস্টেম পেয়েছে।

এইচকিউ-৯ হলো একটি দীর্ঘপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বিমান, ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করতে সক্ষম। এতে রয়েছে আধুনিক অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (Active Electronically Scanned Array (AESA) এবং ম্যাক ৪ (Mach 4) গতির মিসাইল—যা শব্দের গতির তুলনায় ৪ গুণ দ্রুত।

প্রতিবেদনে এক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, ১২ দিনের সংঘাতে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষা অবকাঠামো দ্রুত পুনর্গঠনের জন্যই এইচকিউ-৯ সংগ্রহ করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং হোয়াইট হাউসেও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

এইচকিউ-৯ হলো একটি দীর্ঘপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বিমান, ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করতে সক্ষম। এতে রয়েছে আধুনিক অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (Active Electronically Scanned Array (AESA) এবং ম্যাক ৪ (Mach 4) গতির মিসাইল—যা শব্দের গতির তুলনায় ৪ গুণ দ্রুত।

এই একই সিস্টেম চীন সম্প্রতি পাকিস্তানকেও দিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা ভারতের সম্ভাব্য বিমান হামলা প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে এইচকিউ-৯ এখন শুধু একটি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনৈতিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। এর আগে ইরান চীন থেকে এলওয়াই-৮০ (LY-80) এবং এলওয়াই-৮০-ই (LY-80E) আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমদানি করেছিল। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এইচকিউ-৯ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি উন্নত এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তেল বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে ইরানের এই অস্ত্র সংগ্রহকে অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘অশান্তির অনুঘটক’ হিসেবে দেখছেন। এতে করে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ভারসাম্য নতুন করে টাল খেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন ইসরায়েল অপারেশন রাইজিং লায়ন নাম দিয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে ইরানও শুরু করে পাল্টা ড্রোন ও মিসাইল হামলা। সংঘর্ষ চরমে ওঠে ২১ জুন রাতে, যখন মার্কিন বিমান বাহিনী ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ চালিয়ে ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইরানে ঢুকে পড়ে এইচকিউ-৯, যা নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে গোটা পশ্চিম এশিয়ায়।

বিশ্লেষকদের মতে, এইচকিউ-৯’র মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সম্ভাব্য হামলার জবাবে তারা আরও প্রস্তুত থাকবে। তবে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন বা তেলআভিভ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ