হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যুতে কি ইসরায়েলের হাত আছে?

ইব্রাহিম রাইসি
ইব্রাহিম রাইসি  © সংগৃহীত

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৬৩ বছর বয়সে নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সহমর্মিতা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০২১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইব্রাহিম রাইসি। রাইসিকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে অভিহিত করেছেন কাতার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহজুব জুইরি। তার মতে, রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ রাইসি ইরানের রাজনীতিতে একজন ‘হেভিওয়েট’ নেতা।

রাইসি তার কট্টরপন্থী অবস্থান এবং দেশের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য পরিচিত। তিনি ১৯৮৮ সালে দেশটির হাজার হাজার কারাবন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার নেতৃত্বেই ইরান ইসরায়েলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

আরও পড়ুন: ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির নিহত হওয়া বিশ্বব্যাপী জল্পনা-কল্পনা ও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্টের এমন মৃত্যুতে দেশটিতে অনিশ্চয়তার দেখা দিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু ইরানের ক্ষমতার অভ্যন্তরে শুধু দ্বন্দ্বের সূত্রপাতই করবে না বরং এই অঞ্চলে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং সংঘাতের পটভূমির মধ্যে, রাইসির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হঠাৎ অনুপস্থিতি দেশটির ক্ষমতার ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।

যদিও বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেশটির সরকার জানিয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমটি ঘটেছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এর পেছনে নাশকতা থাকতে পারে। বিতর্কিতভাবে ক্ষমতায় আসা এবং ইরানের ভেতরে-বাইরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া রাইসির এমন মৃত্যুর ঘটনায় ভেতরের শত্রু বা ইসরায়েল যুক্ত কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুন: ইব্রাহিম রাইসির পর ইরানের দায়িত্ব নেবেন কে?

ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ধারণা অনুমান করছেন যে- এই দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েল থাকতে পারে। দামেস্কে ইসরায়েল কর্তৃক একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা এবং পরবর্তীতে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকার ধারণা জোরদার হয়েছে। যদিও ইসরায়েল ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে কার্যক্রমের সঙ্গে তবুও তারা কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে লক্ষ্যবস্তু করেনি।

ইতিমধ্যে ইসরায়েল রাইসির মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। নাম প্রকাশ না করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এটাতে আমরা ছিলাম না’।

বিশেষজ্ঞরাও এ ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েরের জড়িত থাকার সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা এর জন্য ইরানকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে সামরিক এবং পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা।

আরও পড়ুন: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি কে?

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। কারণ, ইসরায়েল কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার দিকে ধাবিত যায়নি। এমন কিছু করতে যাওয়া মানে ইরানকে যুদ্ধের দিকে আমন্ত্রণ জানানো।

ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটেছে; যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলার মতো অনেক বিষয় রয়েছে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে ইসরায়েল এবং হামাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে আঞ্চলিক এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এক প্রান্তে পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্ব নিয়ে যেকোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তা এসব গোষ্ঠীকে সম্ভাব্য বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ