কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়াতে হবে

  © প্রতীকী ছবি

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা কুসংস্কার দূর করে, মানুষকে জ্ঞানের আলো দান করে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ায় এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে করে সমৃদ্ধ। তাই শিক্ষা জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষাই কর্মমুখী শিক্ষা। শুধু কর্মসংস্থান নয়, উন্নয়নের জন্যও প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা।

যে শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ কোনো একটা বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষালাভ করে জীবিকা অর্জনের যোগ্যতা অর্জন করে, তা-ই কর্মমুখী শিক্ষা। সাধারণ শিক্ষার অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। আধুনিক বিশ্বে বেঁচে থাকার জন্য নানা কলাকৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। অথচ ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাত্রায় আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি।

কারণ, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকটা পরাধীন যুগের। এখনও ব্রিটিশদের কেরানি বানানোর শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত। গতানুগতিক গ্রন্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ডিগ্রিধারী শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করছে বটে; কিন্তু তা কর্মভিত্তিক না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। ফলে দেশ আজ ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ। এ শিক্ষা গ্রহণের পর একজন শিক্ষার্থীকে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বেকারত্ব যে কোনো দেশের জন্য অভিশাপ। কর্মমুখী শিক্ষা বেকারত্বের নিদারুণ অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এ শিক্ষা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

এখানে আছে মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক বৃত্তি নির্বাচনের স্বাধীনতা। আছে সুস্থ, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের অঙ্গীকার। কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই এ শিক্ষার আরও প্রসার প্রয়োজন।

এ শিক্ষার ওপর যত বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত সুদৃঢ় হবে। তাই আমাদের উচিত এ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো। বস্তুত এ শিক্ষার মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মধ্য দিয়েই এ দেশ হতে পারে স্বনির্ভর।

আমাদের দেশে বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রচলিত। এর সঙ্গে কারিগরি, প্রকৌশলী, চিকিৎসা, ভোকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে দেশে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। ফলে প্রচলিত পন্থায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে লাখ লাখ যুবক বেকারত্বের গ্লানি বহন করছে।

অথচ উন্নত দেশগুলোর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এমনকি এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ইত্যাদি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশেও কর্মমুখী শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত, যেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। এর কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষা উপেক্ষিত। এমনকি সাম্প্রতিককালে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অনেক কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের পরও কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে।

দেশে কর্মমুখী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষা, লোকবল, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রকট সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন।

 

মুনিয়া মুন: প্রাবন্ধিক

 

সূত্র: যুগান্তর


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence