ডাকসু ভিপির রাজনৈতিক দল: তারুণ্যের প্রত্যাশা

  © টিডিসি ফটো

দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ইতিমধ্যে যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে অঙ্গসংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরণের কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দেশের শিক্ষিত শ্রেণী ও তরুণদের মধ্যে বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তায়নের এই সময়ে দেশের মানুষের বিশাল একটি অংশ রাজনীতিবিমুখ। তারা গোপনে কিংবা মননে কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করলেও পরিবেশ, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকাশ্য রাজনীতিতে নারাজ। তবে তারা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী। এই শ্রেণীটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আছেন। এই বিশেষ শ্রেণীটাকে প্রধান টার্গেট করে ডাকসু ভিপি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা এতো বেশি যে, সঠিক সংখ্যা বলাও কঠিন। কাজেই গতানুগতিক এসব রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মহলে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তবে ডাকসু ভিপির রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেশের শিক্ষিত শ্রেণীকে ভাবিয়েছে, নাড়া দিয়েছে। এই নাড়া দেয়ারও অবশ্য কারণ রয়েছে। নুরের আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগী মনোভাব এক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

নুরুল হক নুর কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আলোচিত ছাত্রনেতা। একাধিকবার তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। এরপর সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হন। ভিপি নির্বাচিত হয়েও তিনি কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন। বারবার হামলার পরও তিনি রাজপথ, আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে দূরে সরে যাননি। এমনকি আহত অবস্থায়ও তাকে বিভিন্ন মিছিল, মিটিংয়ে দেখা গেছে। তার এই আপোষহীন অবস্থানের কারণে তিনি বিভিন্ন মহলে সমাদৃত হয়েছেন।

এই গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এবার সদলবলে আবির্ভূত হচ্ছেন রাজনীতির ময়দানে। তাদের পেছনের শক্তি হিসেবে দেশের প্রতিষ্ঠিত কিছু মানুষ কাজ করছেন। নুরুল হক নুর জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের রাজনীতি হবে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। তারা কোন জোটের সাথে নির্বাচনে যাবেন না। আমাদের দেশের পরিবারতান্ত্রিক যে রাজনৈতিক ধারা বিদ্যমান, নুরের দলে সেই ধারা থাকবে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কেউ এই রাজনৈতিক দলের মূল চেয়ারে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। এরকম প্রচলিত ধারার কিছু উল্টো স্লোগান তরুণদের এই দলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করছে।

দেশের ভোটারদের বড় একটি অংশ তরুণ। তারা অধিকার সচেতন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অধিকারের প্রশ্নে এদেশের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্র, তরুণরা। তারা সম্মিলিতভাবে চাইলে দেশের রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব। করোনাকালীন এই সময়ে দেশের নড়বড়ে শাসনব্যবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি চিকিৎসা। দেশে আজ মানুষ মারা যাচ্ছে সেই চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে। খাদ্যের অভাবে মানুষ আত্মহত্যা করছে। বলতে গেলে, করোনা দেশের হ য ব র ল অবস্থা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তবুও কর্তাব্যক্তিদের কথার ফুলঝুরি থামে না। দেশের তরুণরা এসবের পরিবর্তন চায়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল অধিকারের প্রশ্নে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। দেশে সেই বৈষম্য আজও বিদ্যমান। যোগ্যতার চেয়ে খালাতো ভাই, চাচাতো ভাই পরিচয় আজও মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব অন্যায় প্রতিরোধ করা না গেলে দেশের সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বৈষম্য, জুলুমের প্রতিরোধে প্রয়োজন নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী চায় দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থাকবে। রাজনীতির নামে প্রতিহিংসা থাকবে না। ক্ষমতায় যেতে প্রতিযোগিতার নামে চলবে না দমন, পীড়ন। সর্বোপরি সরকারের মূল উদ্দেশ্যই হবে দেশের এবং দেশের মানুষের কল্যান সাধন।

ডাকসু ভিপির রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। নিজেরা তরুণ হওয়ায় তারা তরুণ শ্রেণীর মনোভাব বুঝতে সক্ষম। কাজেই বলা যায়, একে অপরের পরিপূরক। ডাকসু ভিপির রাজনৈতিক দল তরুণদের চাহিদা কতটুকু মেটাতে পারে কিংবা বিশ্বাসের মূল্য দিতে পারে তা এবার দেখার পালা।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ