ইঁদুর এখন সিঁদুর মেখে বিড়াল ধরতেছে

  © টিডিসি ফটো

গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে রাবি ইতিহাস বিভাগ ও জন ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘Culture, Peace and Education: From the Perspective of peoples History’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সভাপতির বক্তৃতায় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ‘জয় হিন্দ’ বলায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং নানা স্থানে আলোচনা থেকে শুরু করে সু-উক্তি, কটূক্তি কোন কিছুই আর বাদ নাই। প্রসঙ্গের শুরুতেই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কেননা উক্ত বক্তব্যের কারনে ইতোমধ্যে অনেকে মনঃ কষ্ট পেয়েছেন।

তবে একটা প্রশ্ন এসেই যায় যে, ২৬ তারিখের বক্তব্য অথচ ৪-৫ দিন পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় কেন? আবার এ কথাটিও বলা যায় যে, এই সেমিনারে শত-শত মানুষ উপস্থিত থেকে এবং বক্তব্য শুনেও কেউ কোন ধরনের প্রতিবাদ করলো না কেন? তবে কি সেমিনারে উপস্থিত সবাই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? এ ধরনের নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে সবার হৃদয়ে। প্রশ্নগুলো করা যদি সঠিক হয় তবে উত্তরও পাওয়া যাবে।

পৃথিবীতে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে যেমন ভালো দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। সবাই ধোয়া তুলশি পাতা নয়। একইভাবে ষড়যন্ত্রকারীও রয়েছে আবার ধান্দাবাজ, সুবিধাবাদী, রং বদলকারীরও অভাব নাই। তবে বাস্তবতা হলো- ‘সু-সময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় কেউ কারো নয়’। তাই সুযোগের সদ্বব্যবহারে- ইঁদুর এখন সিঁদুর মেখে বিড়াল ধরতেছে।

স্বাভাবিকভাবে ভারত বর্ষের ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যেমন প্রাগৈতিহাসিক যুগ, ঐতিহাসিক যুগ, প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগসহ নানা যুগ ও বিষয় আসবে তেমনি ব্রিটিশ শাসন ও পাকিস্তান পর্বও আসবে। যেকোন মানুষের পক্ষে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করাটা বেশ কষ্ট সাধ্যও বটে। তবে বর্তমান বাংলাদেশের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে ৪৭ এবং ৭১ অতি গুরুত্বপূর্ণ আবার এ ক্ষেত্রে ‘জয় হিন্দ’ ও জয় বাংলা’ ¯স্লোগানটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেননা ‘জয় হিন্দ’ এর মাধ্যমে যেমন দেশ ভাগ হয়েছে তেমনি ‘জয় বাংলা’র মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

শত-শত ব্যক্তি এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন এবং মাননীয় উপাচর্যের সম্পূর্ণ বক্তব্য শুনেছেন। সে সকল ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জেনেছি যে- তিনি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্রিটিশ ভারত, দেশ ভাগ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন এবং এই প্রেক্ষাপটের আলোচনা শেষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন চরম দুঃসময়ে ভারত সরকার ও তার জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা ও আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় হিন্দ’ ¯স্লোগানগুলো উচ্চারণ করেন। বিষয়টি একেবারেই প্রাসঙ্গিক।

একই সাথে রাবি মাননীয় উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক বিষয় নিয়ে যে মিথ্যা অভিযোগ এর বিপরীতে দেখা যায়- ‘উপ- উপাচার্যের উপস্থাপিত তারিখে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান।

তবে তিনি দাবি করেন ‘ব্যবসায়ীক কারণে গত বছরের ৪ নভেম্বর নিয়োগ প্রত্যাশী নুরুল হুদার মাধ্যমে তিনি (যৌথ হিসাব) ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই তারা ওই টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফেরত দিয়েছেন। তিনিও ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। সুত্র: (https://www.ittefaq.com.bd/education)

অথচ আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিট রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়কে অস্থিতিশীল এবং অত্যন্ত চতুরতার সাথে দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা যারা করছে, এরা তাহলে কারা? তবে কি যাদের উপর এখনও দুদক কর্তৃক দুর্নীতির তদন্ত চলছে, তারাই আজ বাঁচার তাগিদে বড় বড় বুলি আওরাচ্ছে নাতো? আর এ কারনেই কি ইঁদুর এখন রং (সিঁদুর) মেখে বিড়াল ধরার চেষ্টা করছে? একবার ভেবে দেখা দরকার এবং একই সাথে এদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ধরকার বলেই আমরা মনে করি।

লেখক:

সহযোগী অধ্যাপক,
চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
e-mail: artisthumayon@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!