একযুগ আগে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে বর্বর হামলার বিচার এখনও পায়নি শিক্ষকরা

সেদিন মারধরে আহত হয়েছিলেন লেখকও
সেদিন মারধরে আহত হয়েছিলেন লেখকও  © টিডিসি সম্পাদিত

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন বাতিল ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর (আজ থেকে ঠিক একযুগ আগে) ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দেয়। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনী তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। পুলিশ জানিয়ে দেয়, বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমবেত হতে দেবে না এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হতে দেবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন যাতে গুলশানের বাসা থেকে বের হতে না পারেন সেজন্য ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ তার বাসার সামনে পাঁচ-ছয়টি বালুভর্তি ট্রাক এলোমেলো করে রাখে এবং তাঁকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখেন। বেগম খালেদা জিয়া যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন সে জন্য ঢাকার রাজপথে ত্রাস সৃষ্টি করে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। 

বিএনপি চেয়ারপার্সন এদিন পূর্ব ঘোষিত বিকাল ৩টার নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং বাসার গেটের ভেতরে থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তাৎক্ষণিক বক্তব্য প্রদান করেন। এদিকে সকাল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লাঠি, বন্দুক, টিয়ারশেলসহ যুদ্ধক্ষেত্রের মতো সজ্জিত হয়ে ঢাকা শহুরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। সে সময় ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক মারধর ও গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এদিন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের কর্মসূচি পালন তো দূরে থাক, রাজপথে দাঁড়াতেই দেয়নি। তবে এদিন বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সকাল থেকে উক্ত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বের হলে পুলিশি বাধা ও আওয়ামী গুন্ডা বাহিনীর হামলার শিকার হন। 

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির সমর্থনে ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাদাদলের শিক্ষকগণ যৌথভাবে দুপুর দুইটার দিকে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন অভিমুখে রওয়ানা দেন। উক্ত কর্মসূচিতে ইউট্যাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক তাহমিনা আখতার, ইউট্যাবের বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ইউট্যাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান ও অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, সাদা দলের সাবেক নেত্রী অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।

দুপুর ২টার দিকে শিক্ষকদের মিছিল জাতীয় ঈদগাহের সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা প্রদান করে। শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আপনারা এখান থেকে এক্ষুনি চলে যান, আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পারবো না”। পুলিশি বাধায় শিক্ষকগণ হাইকোর্টের প্রধান ফটক সংলগ্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক সমাবেশ শুরু করে। উক্ত সমাবেশ চলাকালেই শিক্ষকগণ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ ও আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী কর্তৃক হামলার শিকার হন। উক্ত হামলায় ইউট্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী মারাত্মক আহত হন। এছাড়া উক্ত কর্মসূচিতে ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রশীদ, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স ম মোস্তফা আল মামুনসহ অনেক শিক্ষক আহত ও লাঞ্ছিত হন।

এদিন আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ও প্রজন্মলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে গুন্ডাবাহিনী নির্মমভাবে ইউট্যাব ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাদা দলের সাধারণ শিক্ষকদেরকে নির্মমভাবে লাঠিপেটা ও কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এই হামলা থেকে নারী শিক্ষকরাও রেহাই পাননি। ঐ দিন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের যেভাবে পিটিয়ে আহত করেছে তা অবর্ণনীয়। এদিন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি সিরাজের নেতৃত্বে পুলিশ নীরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করে। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তরীন করে রাখা এবং ওই দিনের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ভন্ডুল কার্যত দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যেখানে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়।

ঐদিনের হামলায় যেসব ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী অংশ নিয়েছিল অদ্যাবধি তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের উপর এহেন হামলার বিচার শিক্ষকরা এখনও পায়নি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যেসব শিক্ষক লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছে সে সকল লাঞ্ছিতকারীদের বিচার নিশ্চিত হবে বলে শিক্ষকরা আশা করেন।

লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, ইউট্যাব ও অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!