গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪৭ বছরে সংগ্রামী বিএনপি
- মাহমুদ ইসলাম কাজল
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৭ AM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ইতিহাস ৪৭ বছরের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও সাফল্যের এক উজ্জ্বল চিত্র। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর হাতে গড়ে ওঠে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে এক শক্তিশালী প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান, ২০০৭–০৮ সালের সেনাসমর্থিত শাসনকাল, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট দমননীতি—সব ক্ষেত্রেই বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথের প্রথম সারিতে ছিল। দমন-পীড়ন, মামলা, গ্রেফতার, হত্যা ও গুমের শিকার হলেও বিএনপি কখনো গণতন্ত্রের দাবিতে আপস করেনি।
বিএনপি শুধু আন্দোলনের দল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দিগন্ত উন্মোচিত হয় বিএনপির হাত ধরে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেয়ে বিএনপি পল্লী বিদ্যুতায়ন, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, পোশাক শিল্পের বিকাশ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নেও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হয়।
বিএনপির কঠোর ও আপোষহীন নেতৃত্বের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া, যিনি দমন-পীড়ন ও হুমকির মুখেও কখনো জনগণের স্বার্থের জন্য আপস করেননি। তার দৃঢ় নেতৃত্ব বিএনপিকে সবসময় গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শক্তিশালী রেখেছে। তিনি জনগণকে সাহস দিয়েছেন, রাজনীতিকে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা দেশ পরিচালনার কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপির ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেছেন। এই কর্মসূচি একটি গণতান্ত্রিক, আধুনিক, মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি। এতে অন্তর্ভুক্ত—গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্পের আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি প্রণয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রসার, তরুণ প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি দক্ষতায় সমৃদ্ধ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই পদক্ষেপ।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, "ছাত্ররাজনীতি কেবল ক্ষমতার জন্য নয়, বরং জাতি গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র, যা তরুণদের সেবার মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেয়।" তার নেতৃত্বে বিএনপি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও জনমুখী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা, নৈতিক রাজনীতি প্রচার করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
৪৭ বছরের সংগ্রাম, সাফল্য, আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ইতিহাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিএনপি আজ নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। এই পথচলায় বিএনপির স্বপ্ন হলো—একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে প্রতিটি নাগরিক সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করবে, দেশ হবে বিশ্বে সমৃদ্ধ ও মর্যাদাসম্পন্ন। একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও ন্যায্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের সব মানুষ—নারী, পুরুষ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, যুবক ও প্রবীণ—একত্রিত হয়ে কাজ করবে। দেশপ্রেম, ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ, নৈতিক নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী শক্তির সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চল ও সম্প্রদায়ের মানুষ দেশের উন্নয়ন, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক কল্যাণ নিশ্চিত করবে। নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রমিক ও কৃষকের অধিকার সুরক্ষা, শিক্ষা ও প্রযুক্তির সমান সুযোগ, যুব প্রজন্মের নেতৃত্ব বিকাশ—এগুলো দেশের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলবে।
এই একতাবদ্ধ চেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধি সর্বোচ্চ মর্যাদায় থাকবে, প্রতিটি নাগরিক স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করবে, নিজেকে সাফল্যের শীর্ষে দেখতে পাবে এবং দেশ আন্তর্জাতিক মানে সম্মান ও মর্যাদায় সমৃদ্ধ হবে। বিএনপি চায় একটি দেশ যেখানে মানুষ আনন্দিত, নিরাপদ, আত্মনির্ভর, শিক্ষিত ও সচেতন থাকবে; যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক—চাষী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী—একসাথে দেশের গৌরব, ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধি রক্ষায় অবদান রাখবে। এই লক্ষ্য, এই স্বপ্ন ও এই একতাবদ্ধ প্রচেষ্টা দেশকে বিশ্বমানের সমৃদ্ধ, ন্যায্য ও মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল