গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর: সাংবাদিকতা কত দূর এগোল?

ড. নাদিম মাহমুদ
ড. নাদিম মাহমুদ  © টিডিসি সম্পাদিত

গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা পত্রিকাগুলোতে আসছে। কিন্ত গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সাংবাদিকতা কেমন হয়েছে তা নিয়ে তেমন লেখা চোখে পড়েনি। তাই ভাবলাম এই শিরোনামে একটা লেখা লিখব। কিন্তু সেই লেখাটি আদৌও প্রয়োজন কি না, তা বুঝতে পারছি না।
 
সাংবাদিকতার মোড়ক পরিবর্তনের যে চেষ্টা থাকার প্রয়োজন, কার্যত আমরা গত এই বছর সেটা দেখতে পাইনি। এমনকি আগের সরকারের সময় যে বিষয় লেখা যেত না বলে আমাদের সাংবাদিকরা অভিযোগ করত, ঠিক সেই বিষয়গুলোও গত এক বছর পাঠকরা ঠিক কতটা পেয়েছে, তা আলোচনার বিষয় হয়ে যেতে পারে।

তবে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গণমাধ্যমের উপর যে আক্রমণ (চাকরিচ্যুত, মামলা, হাঙ্গামা) হয়েছে, তা এই মহাদেশে আর কোন দেশে এমনটা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। বিশেষ করে গণমাধ্যমগুলোতে রাতারাতি দখল করে ও অপেশাদার সাংবাদিকদের হাতে চলে যাওয়ার খেসারত এই জাতিকে দিতে হবে।

গণমাধ্যমগুলোর কণ্ঠরোধ করা কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর যে ‘স্বভাব’ শাসকগোষ্ঠির ভিতর চর্চিত ছিল, সেটাই অভ্যুত্থান পরবর্তীতেও চর্চিত হয়ে আসছে, যা ছিল প্রত্যাশিত। গতানুগতিক ধারাবাহিকতায় সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এখনো পিছিয়ে।

আরও পড়ুন: প্রেসার গ্রুপ কি চাঁদাবাজ গ্রুপে রূপান্তর হয়েছে? 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সবচেয়ে মূল্যাবান যে কাজটি করবার কথা ছিল, গণমাধ্যমের সংস্কার। সংস্কার কমিশনের বেশ ভাল ভাল সুপারিশ ছিল, যা বাস্তবায়ন করতে গেলে, কখনোই এই সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখাপেক্ষী হতে হতো না, কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। বরং গণমাধ্যমগুলোতে ‘মবক্রেসি’ করে যে ভীতকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, এবং এখনো যে বিরাজমান তা ‘গণতন্ত্রের’ জন্য হুমকিস্বরুপ। মালিকপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, একদল মানুষ সংবাদপত্র দখলের মহোত্‌সব করেছে। 

ফাসিস্টদের দোসর তকমা দিয়ে বহু সাংবাদিকদের মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে নানাভাবে হেনেস্তা করা হয়েছে। ফলে মবদের দাবি মেনে নিয়ে বাড়তি ঝামেলা এড়ানোর জন্য গণমাধ্যমগুলো সেল্ফ সেন্সরে চলে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই আগের সময়ের মতই সরকারের গুণকীর্তন নিয়ে ব্যস্ত। বিটিভি সেই বাতাবিলেবু চাষ থেকে বের হতে পারেনি। ফলশ্রুতিত, গণমানুষের সংবাদমাধ্যম হওয়ার যে আকাঙ্খা ছিল তা পূরণ হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আগামী দিনেও সংবাদপত্রগুলো কর্তৃত্ববাদীদের ধারায় থাকবে এবং ‘গণতন্ত্র’ উত্তোরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি।

পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য সংবাদপত্র না হলে, দলীয় অ্যাক্টিভিস্টদের হাত থেকে সংবাদপত্রগুলো মুক্ত না হলে দেশের অন্যন্য সেক্টেরের মত পড়তি অবস্থায় থাকবে আমাদের ‘সাংবাদিকতা’। লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিকতার মোড়কে চলা সংবাদমাধ্যমকে যে ‘ক্ষমতাশাহীদের’ হাতের পুতুল হতে পছন্দ করে কিংবা সরকারও তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তা থেকে আপাতত সাংবাদিকতা মুক্ত হচ্ছে না।

ড. নাদিম মাহমুদ: লেখক ও গবেষক; ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: nadim.ru@gmail.com
(মতামত লেখকের নিজস্ব)


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!