বাণী বন্দনায় বসন্ত পঞ্চমী

  © ফাইল ফটো

প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে পূজো-পার্বণের আচারাদি উপমহাদেশে উদযাপিত হয়ে আসছে। এই উদযাপনে প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ উৎসব মুখতায় একত্রিত হয় সম্প্রীতির মেলবন্ধনে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রারম্ভে পলাশ অনুরাগে বার্তা দেয় শ্বেতশুভ্র আগমনের। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসে মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষের পঞ্চমী তিথি। শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা। 

মুখরিত হয় মায়ের বন্দনা মন্ত্র ‘ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে; বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তুতে।’ শ্বেতপদ্মে উপবেশিত পুস্তক, বীণা হস্তে বীণাপাণি; বিদ্যা, জ্ঞান এবং সঙ্গীতের আরাধ্য দেবী মা সরস্বতী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে’র লেখায় ‘ও দু’টো দিন তুমি যেন অন্য নীরা’- দু’টো দিনের মধ্যে একটি দোল, অন্যটি সরস্বতী পূজা। সরস্বতী মা জ্ঞান, বিদ্যা, ললিতকলার দেবী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্তি ভরে দেবীর আরাধনা করেন। 

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষের পঞ্চমীর তিথির সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়। পূজার সামগ্রী হিসেবে পলাশ ও বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল, কাঁচা হলুদ, আমের মুকুল, অভ্র-আবীর, দোয়াত-কলম এবং যবের শীষে’র প্রয়োজন হয়। পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া সরস্বতী মায়ের শুভকামনা হেতু ছোটদের পাঠ্যজীবন প্রারম্ভে হাতেখড়ি দেওয়া এবং পূজার পূর্বে ছাত্রছাত্রীদের কুল ভক্ষণ না করার একটি লোকাচার রয়েছে। 

পাঁজি অনুযায়ী, এবছর পঞ্চমী তিথি, ২-৩রা ফেব্রুয়ারি দু’দিনে পড়েছে। তবে পুজোর নিয়মানুসারে ৩রা ফেব্রুয়ারি (বাংলা ২০ মাঘ) সোমবার পুষ্প অভিষেকে উদযাপিত হচ্ছে সরস্বতী পূজা। 

জ্ঞান ও সুরশ্রী প্রদায়িনী মাতা সুশোভন বসনের প্রতিটা আঙ্গিকে ভক্তদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেন। মায়ের বাহন শে^ত রাজহংস জল মেশানো দুধ থেকে দুধটা আলাদা করে পান করতে পারে যা অবিদ্যা থেকে বিদ্যাকে ছেঁকে নেওয়ার আসল শিক্ষা, সেজন্য সরস্বতী মা হংসবাহিনী। প্রকৃত জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এবং প্রতিটা প্রাণের ভূষণে সুর শুভ্র বিনয়ী ভাব জাগ্রত হোক। বাণী বন্দনায় মায়ের কাছে এটাই প্রার্থনা। সরস্বতী মা কি, জয়। বিদ্যার দেবী কি, জয়।

লেখক: উন্নয়নকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ