প্রবীণ জনগোষ্ঠী যেন অবহেলার শিকার না হন

  © সংগৃহীত

১ অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস বা বয়স্ক ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ইউনাইটেড নেশনস ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ তারিখে বয়স্কদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছিল, যার পরে এই দিনটি ১ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে প্রবীণদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালিত হয়। প্রবীণদের নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরা হলো। 

লেখক: শাহ্ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
শিক্ষার্থী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী  

প্রবীণরা আমাদের বটবৃক্ষ, তাঁদের সারা জীবনের অভিজ্ঞতা নবীনের চলার পথের পাথেয়। প্রবীণরা তাদের যৌবনকালে অবিরত সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যানে কাজ করেছেন। তাই এখন সময় এসেছে নবীনদের প্রবীণ ব্যক্তিটিকে তাঁর যথাযথ সম্মান, সেবা, সব ধরনের সহযোগিতা করা। প্রবীণরা অভিজ্ঞতার সারথী। তারা স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে যা সদুপদেশ দেন তা কখনো বৃথা যায় না। তাই সবার উচিত প্রবীণদের উপদেশ শোনা এবং অক্ষরে অক্ষরে তা মান্য করা।

লেখক: শাহ আহমদ রেজা
শিক্ষার্থী: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী 

প্রবীণদের প্রতি নবীনদের শ্রদ্ধা ভক্তি এবং অনুকরণীয় মনোভাব একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক ধারা হিসেবে বিবেচিত হয়। আর একইভাবে এর বৈপরীত্যকে নিন্দার চোখে দেখা হয়। কেননা আদিকাল থেকেই যে সকল সমাজে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি পরিলক্ষিত হয় না সে সকল সমাজব্যবস্থাকে যুগে যুগে দার্শনিকগণ বর্বর বা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ বলে অবহিত করেছেন। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে, পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে এই পর্যন্ত প্রত্যেকটা জাতিই তাদের পূর্বসূরীদের মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মতো মূল্যবান সম্পদ লাভ করে থাকে। বস্তুত প্রবীণগণ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে থাকেন। আর এই ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত। তাই শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রাপ্তির যোগ্য অধিকারী হিসেবে প্রবীণগণ সর্বদিক থেকেই বিবেচিত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রবীণদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রত্যেকটা ধর্মই তার অনুসারীদেরকে প্রবীনদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির নির্দেশনা দিয়েছে।

সর্বোপরি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের অবদান অপরিসীম। পরিবার গঠন, উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণে কর্মময় জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে একসময়ে তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তখন প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি পর্যাপ্ত সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শন করা সমাজের নবীনদের আবশ্যিক কর্তব্য।

লেখক:সাইয়াদুর রহমান শাওন
শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়নগঞ্জ।

প্রবীণ জনগোষ্ঠী যেন অবহেলার শিকার না হন । সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বয়সে মানুষকে প্রবীণ বলে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর যেখানে গড় আয়ু ৭০ বছর। মাঝখানের এই ১০-১১ বছর দেশের অত্যন্ত মেধাবী-দক্ষ-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রবীণদের আমরা অধিক নিকটে পাই। যদি তুলনা করতে হয় তাহলে বলব হাজার হাজার বেতন দিয়ে রাখা ডিগ্রিধারী নবীন পরামর্শদাতার থেকে এই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রবীণদের পরামর্শে পদক্ষেপ গ্রহণ কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আর এজন্যই তারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য।

তুলনামূলক বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়ায় প্রবীণরা সমাজের সর্বক্ষেত্রে অধিকার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রবীনদের সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে পারিবারিকভাবে। শিল্পায়ন নগরায়ন ও অর্থনীতির জীবনধারার পরিবর্তনের ফলে বড় পরিবার ভেঙ্গে ছোট হয়ে যাচ্ছে ফলে পরিবারের মুরুব্বী স্থানীয়দের কোনঠাসা করা হচ্ছে। সমাজে প্রবীণদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও সেটা এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। 

সর্বোপরি পরিবার ও সমাজে প্রবীনদের কোণঠাসা অবস্থা তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতার জন্ম দেয়। তারা নিজেদের অবহেলিত ও অসহায় ভাবতে শুরু করে। দেশের অত্যন্ত অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রবীণ জনগোষ্ঠী যেন সমাজে কোনভাবেই অবহেলা এর শিকার না হয় সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। 

লেখক:মোঃ বেল্লাল হোসেন
শিক্ষার্থী: দর্শন বিভাগ,কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।

প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আজ আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজে অধিকাংশ প্রবীণরা অবহেলিত। সমাজে বা পরিবারে প্রবীণদের সবাই হেয় করে বা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে। মনে করে যে, প্রবীণরা সমাজের বোঝা। এদের দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু প্রবীণরা আমাদেরকে সুন্দর উপদেশ বা পরিবারকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে সবসময়। সেখান থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। 

পুরো জীবন-যৌবন ব্যয় করে যারা সন্তানের ভবিষ্যত গড়েন, তাদের অনেকেই শেষকালে ভীষণ একা ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সন্তানের অবহেলা, অবজ্ঞা ও অযত্ন তাদের চরম কষ্টে ফেলে দেয়। বিষাদক্লিষ্টতা ও দুঃখভরা মনে দিনকাল অতিবাহিত করতে হয়। প্রত্যেক ধর্মে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও সর্বস্তরের প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের অসহায়ত্বের সময় সেবাযত্ন করার তাগিদ দিয়েছে। একজন সুস্থ বিবেক ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা এবং তার আত্মীয়-পরিজন ও অন্যান্য প্রবীণদের কখনো অবহেলা বা উপেক্ষা করতে পারে না। তাই আসুন, সব প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হই।

লেখক:মাসুম বিল্লাহ
শিক্ষার্থী:ফাজিল(অনার্স),দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা,ঢাকা।            

প্রবীণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। জীবনের ক্রমাগত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং দৈহিক অবক্ষয় এবং কর্মক্ষমতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই বার্ধক্য কালে প্রবীণরা যেন হয়ে পড়ে পরিবারের অপ্রয়োজনীয় এক বোঝা । ফলশ্রুতিতে তারা সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার হয়। এর কারণ হলো আমরা মানুষের মর্যাদা, সম্মান ও ভালোবাসা প্রাপ্তির মানদণ্ড হিসেবে আয়ের বয়সসীমাকে মনে করি। প্রবীণরা কথা বলতে চায় কিন্তু আমাদের শোনবার সময় নেই, অথচ এই প্রবীণদের হাত ধরেই আমরা বড় হয়েছি, এই প্রবীণরাই আমাদের কারো বাবা-মা কারো বা দাদা-দাদী। যারা আমাদের হাঁটতে শিখিয়েছেন, আমাদের ছোট হতে বড় করেছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রম। সারাজীবন শ্রম ব্যায় করে যারা আমাদের জন্য বিশাল বাড়ি, গাড়ি, ধনদৌলতের পাহাড় গড়েন, শেষ বয়সে এগুলো উপভোগের সৌভাগ্য তাদের হয় না। আমরা যারা প্রবীণদের অবহেলা করি, এই কথাটা মনে রাখতে হবে "আজকের নবীন আগামী দিনের প্রবীণ।" হয়তোবা আজকে আমাদের যৌবন আছে, আছে কর্মক্ষমতা, তবে চিরদিন এর অহংকার থাকবে না। সময়ের সাথে আমাদের ও পৌঁছাতে হবে বার্ধক্যে । তখন আমাদের প্রজন্মের কাছে অবহেলা ছাড়া আর কি বা আশা করা যায়। নিজের প্রবীণ জীবনকে সুরক্ষিত ও সুন্দর করতে হলে, আজকের প্রবীণদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence