বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং নিয়ে যে বিষয়টি খোলাসা করা জরুরি

লেখক ও প্রতীকী ছবি
লেখক ও প্রতীকী ছবি  © টিডিসি ছবি

সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশন নামে একটি লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। কিন্তু নাম আছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তপ্ত। অনেকেই এর কারণ না জেনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বাজে মন্তব্যও করছেন, যা দুঃখজনক। আসুন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি।  

যে সকল প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং করে সেগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা যায়। প্রথম গ্রুপে ফেলা যায় বিখ্যাত র‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান যেমন- টাইমস হায়ার এডুকেশন, কিউএস এবং সাংহাই র‍্যাঙ্কিং। এসব র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিতে হলে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং প্রতি বছর নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে তাদের কিছু তথ্য দিতে হয়।

যেমন- আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট এবং পিএইচডি লেভেলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ ইত্যাদি। আর বাকি অনেক তথ্য তারা বিভিন্ন সোর্স থেকে নিজস্ব মেকানিজমে সংগ্রহ করে। যেমন- স্কোপাস ডেইটাবেইস থেকে তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশনার সংখ্যার তথ্য নেয়। 

এর পাশাপাশি তারা প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম, এমপ্লয়ারদের নিকট কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি তা বের করার জন্য এক বড় ধরনের সার্ভে করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া তথ্য ও তাদের নিজস্ব মেকানিজমে সংগ্রহ করা এসব তথ্য র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে কিউএস, টাইমস হায়ার এজুকেইশান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের করা র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিতে হলে প্রতিবছর তাদের তথ্য পাঠাতে হয়। 

এবার আসি ২য় গ্রুপের  র‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান যেমন- সিমাগো র‍্যাঙ্কিং, ওয়েববোমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিং, ইত্যাদি। এই ২য় গ্রুপের র‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য পাঠাতে হয়না। তারা বিভিন্ন ডেটাবেইস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার তথ্য, সামজিক প্রভাবের তথ্য, ইনোভেটিভ গবেষণার তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। 

যেমন- ওয়েববোমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিংয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দেশে ২য় এবং বিশ্বে ১২৩৫। উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে এ র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিতে কোন তথ্য দিতে হয়নি বা স্পেনের যে প্রতিষ্ঠান এ র‍্যাঙ্কিং করে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্তির জন্য তথ্য পাঠিয়েছে। তাই কিছুদিন পর কিউএস যে র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করবে তাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভালো অবস্থানে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। টাইমস হায়ার এডুকেশানে অন্তর্ভুক্তির জন্য এতোদিন যোগাযোগ করা হয়নি এবং তথ্য পাঠানো হয়নি। তাই সম্প্রতি প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেইশান র‍্যাঙ্কিংয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। তবে এ বছর থেকে টাইমস হায়ার এডুকেশান র‍্যাঙ্কিংয়ে তথ্য পাঠানো শুরু করলে সামনের দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই ভালো অবস্থানে থাকবে। 

লেখক: অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ