শিক্ষিকার লাশ উদ্ধার: নেপথ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া?

খাইরুন ও মামুন
খাইরুন ও মামুন  © সংগৃহীত

কলেজশিক্ষিকা খায়রুন নাহার ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে দাবি করেছেন তার স্বামী মামুন। তার দাবি, ছয় লাখ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথম সংসারের বড় ছেলের সঙ্গে খায়রুন নাহারের মনোমালিন্য ছিল। এজন্য তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ফলে আত্মহত্যা করেন। তবে এ ঘটনাকে ‘হত্যা’ বলে দাবি করেছেন খায়রুন নাহারের স্বজনরা।

তার স্বামী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে পুলিশ সুপার (এসপি) রিটন কুমার সাহা গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, ‘টাকা-পয়সা নিয়ে গত শনিবার রাতে মামুনের সঙ্গে খাইরুনের ঝগড়া হয়। এরপর রাত সোয়া ২টার দিকে মামুন বাসা থেকে বাইরে চলে যান। তখন খাইরুন তাঁকে ফিরে আসার অনুরোধ করলেও তিনি ফেরেননি। এরপর ভোর ৬টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন, ওড়না দিয়ে খাইরুন ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন। তখন বঁটি না পেয়ে গ্যাস লাইটার দিয়ে ওড়না পুড়িয়ে খাইরুনের মরদেহ নিচে নামান মামুন।’

এসপি জানান, ‘খাইরুনের টাকা-পয়সা মামুন ভোগ করলেও আগের ঘরের ছেলেকে টাকা দিতে চাইছিলেন না। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল।’

আরও পড়ুন: শোক দিবসে এমপির সামনেই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

এসপি আরো জানান, ‘তাঁরা ওই দম্পতির ভাড়া বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তাতে রাত ২টা ১৭ মিনিটের দিকে মামুনকে বাসার বাইরে যেতে দেখা গেছে। আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে ওই বাসার দেড় কিলোমিটার দূরের জেলগেটের। তাতে কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে মামুনকে।’    

তবে ওই কলেজ শিক্ষিকার আত্মীয়দের অভিযোগ, খায়রুনকে হত্যা করা হয়েছে। খাইরুনের চাচাতো ভাই ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, এরই মধ্যে মামুন তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি আধাপাকা করেছেন। ওই টাকা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন খাইরুন।

খাইরুনের খালাতো ভাই নাইম অভিযোগ করেন, বিয়ের পরে খাইরুন টাকা দিয়ে মামুনকে দুটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। মামুন এখন আবার নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এসব কারণে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।

পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে মামুন দাবি করেছেন, রাত ২টার দিকে খাইরুনের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তিনি ওষুধ আনতে বাজারে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন দরজা খোলা। পরে শোবার কক্ষে খাইরুনকে ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পান।

ওই বাসার নৈশ প্রহরী নিজাম উদ্দিন জানান, রাত ২টার দিকে মামুন নিচে নেমে এসে জানান তিনি হাসপাতালে যাবেন। তখন তিনি গেট খুলে দেন। ভোরের দিকে ফিরে জানান, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। এরপর ওপরে গিয়ে শোয়ানো মৃতদেহ দেখতে পান নিজাম। পরে পুলিশকে জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বছর আগে ফেসবুকে শিক্ষিকা নাহারের সঙ্গে একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মামুনের পরিচয় হয়। পরে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের ৬ মাস পর তাদের সম্পর্ক জানাজানি হলে ছেলের পরিবার মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার থেকে বিয়ে মেনে নেয়নি। এর আগে ওই শিক্ষিকা বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী বাঘা উপজেলার একজনকে। পারিবারিক কলহে সেই সংসার বেশি দিন টেকেনি। প্রথম স্বামীর ঘরে এক সন্তান রয়েছে।

সে সময় খায়রুন নাহার জানিয়েছিলেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই সময় ফেসবুকে পরিচয় হয় মামুনের সঙ্গে। মামুন আমার খারাপ সময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছে এবং নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। পরে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।

মামুন বলেছিলেন, মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। কে কী বলল, সেগুলো মাথায় না নিয়ে নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নিয়ে জীবন শুরু করেছি। সে সময় সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন মামুন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence