অসুস্থ নানার জন্য কেনা কাফনের কাপড়ে দাফন হলো হিশাম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২২, ০৪:০৬ PM , আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২২, ০৪:৪৪ PM
বন্ধুদের সাথে ঝর্ণা দেখার আনন্দে ভরা স্বপ্ন আজ অভিশাপে পরিণত হয়েছে। মিরসরাইয়ের ভয়াবহ মাইক্রোবাস-ট্রেন দুর্ঘটনায় নিভে গেছে ১১ তরুণের প্রাণ। নিহত ১১ জনের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর খন্দকিয়া গ্রামের হিশাম (১৬)।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অসুস্থ নানার জন্য নিজের টাকায় কেনা কাফনের কাপড়ে দাফন হতে হলো তাকে। শনিবার সকালে হিশামের শিক্ষালয় কে এস নজু মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ওই দিন তার চাচা মোহাম্মদ হোসেনে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, “হিশামকে বেশি দেখাশোনা করত আমার মেজ ভাই আকবর হোসেন। শুনেছি তার অসুস্থ (শয্যাশায়ী) নানার জন্য একটি কাফনের কাপড় কিনেছিল সে (হিশাম); যেটি দেখে আমার মেঝ ভাই তাকে খুব বকাঝকা করেছিল। “আজ তার কেনা কাফনের কাপড় দিয়েই তাকে দাফন করা হয়েছে।”
দাফন শেষে হিশামের চাচা মোহাম্মদ হোসেন জানান, দুই ভাই দুই বোনের সবার ছোট হিশামের বড় ভাই থাকেন স্পেনে, বড় বোন কানাডা প্রবাসী। অপর বোন ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আড়াই বছর আগে তার মা কানাডায় হিশামের বোনের কাছে গেছেন।
মায়ের সঙ্গে হিশামেরও কানাডায় যাওয়ার কথা থাকলেও ভিসা জটিলতায় আর যাওয়া হয়নি। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই মা-বোনের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার।
আরও পড়ুন: মুহূর্তেই অতীত এই ছবির ১১ জন
“হিশাম কোচিং সেন্টার থেকে পিকনিকে যাওয়ার বায়না ধরলেও আমার মেঝ ভাই তাকে যেতে দিতে চাননি। কিন্তু তার কোচিং এবং গৃহশিক্ষক রাকিবের অনুরোধে পিকনিকের আগের দিন বৃহস্পতিবার যেতে দিতে রাজি হয়েছিলেন।”
ওই শিক্ষকও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
হোসেন বলছিলেন, “পিকনিকের আগে আমাদের কাছ থেকে এবং মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে বিদায় নিয়েছিলেন। সকাল ১০টায় সেখানে পৌঁছানোর পর আমাকে জানিয়েছে, নিরাপদে পৌঁছেছে। কিন্তু জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর শুনতে পেলাম, খৈয়াছড়ায় ট্রেন-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের খবর।”
গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) দুপুরে খৈয়াছড়া লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া তাদের মাইক্রোবাসটিকে ঠেলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায় আন্তঃনগর মহানগর প্রভাতী ট্রেন। ওই মাইক্রোবাসেই সকালে হাটহাজারীরে ‘আর অ্যান্ড জে’ কোচিং সেন্টার থেকে খৈয়াছড়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ১৬ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে ওই পিকনিকে চালক ও সহকারীসহ ১৮ জন ছিলেন।
ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন, ছয়জন চিকিৎসাধীন আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে।