মীরসরাই দুর্ঘটনা: কানাডায় মায়ের আঁচলে ঠাঁই হলো না হিশামের

হিশামের পড়ার ঘরে তার  চাচা
হিশামের পড়ার ঘরে তার চাচা

মা কানাডায় থাকেন। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মায়ের কাছে কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল মোসহাব আহমেদ হিশাম। এর আগেই শুক্রবার লাশ হয়ে ফিরে গেলো স্রষ্টার কাছে। মায়ের আঁচলে ঠাঁই হলো না তার। 

শ্রাবণের বৃষ্টিহীন এক দুপুরে সবাইকে অঝোর ধারায় কাঁদিয়ে দূর অজানায় চলে গেল মোসহাব। ছোট থেকেই চাচা আকবর হোসেন মানিকের কাছেই বড় হয়েছিল। তার ভাই–বোনেরাও চট্টগ্রামে থাকেন না। মানিক চাচাই তাকে সন্তানের স্নেহে মানুষ করেছেন। সেই চাচার বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে আসছিল লাশ হস্তান্তরের স্থান রেলওয়ে থানার পরিবেশ। বারবার বলছিল,‘ আমার হিশামকে এভাবে কাফনে দেখার আগে আমার কেন মৃত্যু হলো না।’

শুক্রবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান তিনি। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ইশামের সঙ্গে থাকা আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন।

জানা গেছে, হাটহাজারীতে চাচার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করতেন হিশাম। তিনি হাটহাজারী উপজেলার কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা ২০০৭ সালে মারা যান। চার ভাইবোনের মধ্যে হিশাম ছিলেন ছোট।

আরও পড়ুন: একসঙ্গেই চলতেন, মারাও গেলেন একসঙ্গে

চাচা আকবর হোসেন মানিক কান্নাকণ্ঠে বলেন, হিশামের বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের ছেলের মতো তাকে বড় করেছি। এসএসসি পরীক্ষা শেষে কানাডায় তার মায়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেলো। ওর মাকে আমি কী জবাব দেব।

তিনি আরও বলেন, আজ সকালে হিশাম বলেছিল, শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছিল।

পরিবারের সদস্যরা জানান, হিশামের ভাই অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, আরেক বোন ঢাকায় শিক্ষকতা করেন। ৫৫ বছর বয়সী চাচা আকবর অবিবাহিত হলেও, হিশামকে তিনি সন্তানের মতো মানুষ করেছেন।

হিশামের খালাতো ভাই সাইফ বিন শওকত বলেন, ‘হিশাম খুব ভালো ছাত্র ছিল। জানি না কীভাবে খালাকে সান্ত্বনা দেবো। তিনি এখনো দুর্ঘটনার খবর জানেন না।’

হিশামের বোনের জামাই হাছান মাহমুদ বলেন, হিশামকে জেএসসি পরীক্ষায় পর ঢাকায় নিয়ে পড়ালেখা করাতে চেয়েছি। সেখানে একটি কোচিং সেন্টার ও ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকায় সে থাকেনি। বারবার বলেছে, ঢাকায় ভালো লাগে না। তাই চট্টগ্রামে চলে এসেছে। আমার আর তার বোনের চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল আগামী মাসে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। এসএসসি পরীক্ষার পর তার কানাডায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। হিশামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে।


সর্বশেষ সংবাদ