বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকসজ্জা না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২২, ০২:৩৩ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২, ০২:৩৩ PM
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, বিপণি বিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জা না করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে এ সংকট আরও তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক স্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান লোডশেডিংয়ের কারণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি। সেই বিদ্যুৎ আজকে আমরা সমস্ত বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি, তবে আপনারা জানেন যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যে যুদ্ধ, যুদ্ধ পরবর্তীতে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর যে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিল, ইউরোপ স্যাংশন দিল। ফলাফলটা এই দাঁড়িয়েছে, এখন তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’
প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা, আমাদের নিজস্ব যেটুকু গ্যাস আছে, তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে রাখাটাই একটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।’ কোন বিদ্যুৎ উপকরণের কত দাম বেড়েছে, তার পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘ফার্নেস অয়েল যার মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা, সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে এক হাজার ৪০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩২ টাকা, ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র এমএমবিটিও ১০ ডলারে ক্রয় করা হতো, সেটা এখন ৩৮ ডলার। আর ২৮০ পার্সেন্ট প্রায় তার দাম বেড়ে গেছে। কয়লা সেটাও ১৮৭ ডলার ছিল, সেটা এখন ২৭৮ ডলার।
‘ডিজেল যেটা ছিল ৮০ ডলার, এখন সেটা ১৩০-এ চলে আসছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, এটা নাকি ২০০ থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। অর্থাৎ এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে সারা বিশ্ব যাচ্ছে। আমরা এমন নির্ভরশীল ডিজেলের ওপর সেই ডিজেলের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।’
যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আমেরিকা বা ইউরোপ অবরোধ আরোপ না করলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ নাও হতে পারত বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এই স্যাংশনটা যদি না হতো তাহলে রাশিয়া থেকে, ইউক্রেন থেকে, এরা যুদ্ধও করত, আবার তাদের তেল বা ফার্টিলাইজার, গম এগুলোর সাপ্লাইটাও ঠিক থাকত। যদিও জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেলের উদ্যোগে একটা চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ হয়েছে। তার মধ্যে আমি আছি। সেখানে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে অন্তত বিশেষ করে খাদ্যটা যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, খাদ্য এবং সার যেন তারা আসতে দেন, এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘অবশ্য সে কারণে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, প্রত্যেককে নিজের সঞ্চয়টা বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে; বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।’
লোডশেডিং কখন, কোথায় হবে, তার সূচি তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকাভিত্তিক, কখন কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং হবে, এটার একটা রুটিন তৈরি করে সেভাবে লোডশেডিং হবে, যাতে সেই সময়ে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে, যাতে মানুষের কষ্টটা আমরা লাঘব করতে পারি। সেই বিষয়টা আমাদের নজরে দিতে হবে।
‘আমি মনে করি, দেশবাসী অন্তত এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।’