যে শিক্ষার্থীরা জেল খাটিয়েছে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন হৃদয় মণ্ডল

হৃদয় মণ্ডল
হৃদয় মণ্ডল   © সংগৃহীত

বিল গেটস বলেছেন, 'পৃথিবীতে যতসব প্রযুক্তি রয়েছে সেগুলো শুধু সরঞ্জাম মাত্র, এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার ও অনুপ্রেরণার মূল চাবিকাঠি হলেন শিক্ষক।'

শিক্ষকতা মহান পেশা। একজন শিক্ষক হলেন চালক এবং পথপ্রদর্শক। এ পেশা আত্মত্যাগ, বিনয়, নম্রতা, ধৈর্য্য-এর শিক্ষা দেয়।

দীর্ঘ ১৯ দিন কারাভোগের পর রোববার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন হৃদয় মণ্ডল। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নিজের শিক্ষার্থীদের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এরপর গিয়েছেন জেলে। জামিন পেয়ে সরাসরি আত্মীয়র বাসায় ঢাকায় চলে এসেছেন।

সোমবার দেখা মিলল ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের নিকটে। হাফহাতা শার্ট পরিহিত হৃদয় মণ্ডল; এই হাসছেন, এই আবার কাঁদছেন। হাসিটা উজ্জ্বল হলেও কান্না কান্না ভাব আঁখি জোড়া বুঝতে পারা বেশ কঠিন।

আলাপ হয় বিজ্ঞানের এই শিক্ষকের সঙ্গে। শুরুতেই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। এরপর জানালেন, যেসকল শিক্ষার্থীরা তাকে জেল খাটিয়েছে তাদের তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি জানালেন, সকল প্রশংসা তার। সকল ধর্মের লোককে আমি শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা করে যাব। খবর ভয়েস অফ আমেরিকা।

কারাবাসের প্রশ্নেই স্মৃতি স্মরণ করতে করতে চোখে ভিজে যায় হৃদয় মণ্ডলের। তিনি জানালেন, ‘আমি বন্দীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছি। চোখে পানি এসেছে। সৃষ্টিকর্তাকে বলেছি আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা দাও।’

অভিযুক্ত ছাত্রদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তাদের ক্ষমা করব। কোমলমতি শিশু। শিক্ষক হিসাবে (যদি) ক্ষমাই করতে না পারি, তাহলে শিক্ষক কি করে হলাম। ওরা হয়তো ভুল ডিসিশন নিয়েছে।’

কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও হৃদয় মণ্ডল ঠিক কবে স্কুলে ফিরে যাবেন, সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। জানালেন তিনি প্রশাসন এবং স্কুল কমিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, নিজের নিরাপত্তার ব্যাপার রয়েছে। তারা বললেই তিনি যাবেন।

অন্য স্কুলে বদলি করা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘আমার তো বেসরকারি স্কুল। ট্রান্সফার সম্ভব না। যদি সরকারের ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে অন্য কোথাও যেতে পারি।’

আরও পড়ুন : বাবা রিকশাচালক জেনেই তালাক, বাধা পেরিয়ে মেডিকেলে ভর্তির অপেক্ষায় মেয়ে

নিজের লড়াই সম্পর্কে তিনি জানালেন, ‘আমার মন আনন্দে ভরে গেছে। ভাবলাম আমি তো একা না। তবে আমি তো একা না। আমার যে দুঃখ ছিল, হতাশা ছিল, তা কেটে গেছে।’

তিনি জানালেন, ‘কতটা নিশ্চিন্তে বাস করতে পারব, নিজেই বিচার করতে পারছি না। কত স্বাধীনভাবে বাস করতে পারব। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও নিজে থেকে হতাশা ফিল করছি। কী হবে একমাত্র ঈশ্বরই জানে। তবে আমার বিশ্বাস তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।’

এদিকে হৃদয় মণ্ডল কারাগারে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ঘরের কিছু ছবি ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন সূত্র, অঙ্কের হিসাব-নিকাশ।

এ ব্যাপারে তিনি জানালেন, ‘আমার বাস্তব জীবনের কল্পনা, যদি একটা বাড়ি করতে পারি...ওয়ালে শুধু থাকবে গণিতের সূত্র, গণিতের মহান ব্যক্তিরা। চারদিকে থাকবে গণিতের সূত্র, বিজ্ঞানের সূত্র। থাকবে সেই মহান ব্যক্তিদের ছবি।’


সর্বশেষ সংবাদ