বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের জন্য বিমা বাবদ ১৯৬ কোটি টাকা দাবি
- আজাদ নাকির
- প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২২, ০৪:০০ PM , আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২, ০৫:৫৬ PM
ইউক্রেনে রকেট হামলার পর পরিত্যক্ত জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র জন্য বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) বিমা বাবদ একটি বীমা কোম্পানির কাছে ২২.৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৯৬ কোটি টাকা) দাবি করেছে।
বুধবার (৯ মার্চ) সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ বিএসসি বীমা কোম্পানি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নিকট এই অর্থ দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা অবস্থায় ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি রকেট হামলার শিকার হয়। রকেটের ছোড়া মিসাইলে জাহাজটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং জাহাজটিতে কর্মরত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। হামলার পরের দিন বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় জাহাজটির ২৮ জন নাবিককে বোটে করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর ৬ মার্চ মলদোভা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোমানিয়ায় পৌঁছান তারা। সেখান থেকে বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে তারা সবাই দেশে ফিরেন।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেছেন ‘সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক-ক্রু
বাণিজ্যিক এই জাহাজটি ডেনমার্কের ডেল্টা কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি মোতাবেক ভাড়ায় চলাচল করতো। জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিএসসি ছয়টি জাহাজ কেনে। এরমধ্যে তিনটি অয়েল ট্যাংকার এবং তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার। আর এই বাল্ক ক্যারিয়ারগুলোরই একটি হচ্ছে ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। চীন থেকে কেনা ২০৪ কোটি টাকার এই জাহাজটি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত করা হয়। এসব জাহাজ থেকে বিএসসি আয়ের মোট ৭৮ শতাংশ অর্থ লাভ করতো।
এর আগে গত ২ মার্চ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে রকেট হামলার পরই বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে, জয়েন্ট ওয়ার কমিটি জায়গাটি ‘যুদ্ধাঞ্চল’ ঘোষণার পরও ওই বন্দরে জাহাজ পাঠানো ছিল বিএসসি’র ভুল সিদ্ধান্ত।
তবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধাবস্থায় জাহাজটির যাওয়া ঠিক হয়নি। তবে জাহাজ পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো ভুল হয়নি। কারণ যেসময় জাহাজ গেছে, ওইসময় বন্দরে প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এটা মার্চেন্ট জাহাজ হওয়ায় না যাওয়ারও কোনো সুযোগ ছিল না’।
আরও পড়ুন: আটকে পড়া জাহাজের সবাই এখন নিরাপদ জায়গায়: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
এদিকে, বিএসসি জানিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জাহাজটির প্রধান কন্ট্রোল রুম (নেভিগেশন ব্রিজ) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিপিং কর্পোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেক-উল-ইসলাম জানান, চার্টার প্রক্রিয়া থেকে ইউক্রেনকে বাণিজ্য এলাকার বাইরে রাখা হয়নি।
এছাড়া, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে জয়েন্ট ওয়ার কমিটির সভায় ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কৃষ্ণ সাগরকে যুদ্ধপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জায়গাটিকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে ঘোষণার আগেই অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারির আগেই জাহাজটি ইউক্রেনের ওই বন্দরে প্রবেশ করেছিল।
উল্লেখ্য, বিএসসির বহরে মোট ৮টি জাহাজ ছিল। কিন্তু ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি রকেট হামলায় পরিত্যক্ত ঘোষণার পর সেই সংখ্যা সাতে নেমে এল। জানা যায়, পরিত্যক্ত জাহাজটি ইউক্রেন থেকে সিরামিক কাদামাটি নিয়ে ইতালীয় বন্দর রাভেন্নার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা ছিল। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে শিপিং কর্পোরেশন অবিলম্বে মালামাল নামনো বাতিল করে দিয়ে জাহাজের মাস্টারকে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।