অভাবের তাড়নায় থেমে যাচ্ছে জিপিএ-৫ পাওয়া ইসরাতের পড়াশোনা

ইসরাত জাহান
ইসরাত জাহান  © টিডিসি ফটো

এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে মোছাম্মৎ ইসরাত জাহান (১৫)। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়ও পেয়েছিল জিপিএ-৫। যেখানে ঠিকমত তিনবেলা ভাত জুটেনা কপালে সেখানেতো পড়ালেখা বিলাসিতা। অভাব-অনটনের সংসারে তার শিক্ষাজীবন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের

ইসরাতের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামে। এ গ্রামের শ্রমিক মো. লিটন মিয়ার (৪০) মেয়ে ইসরাত জাহান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সে। ছোট ভাই মো. হাসান নবম শ্রেণিতে ও ছোট বোন মিনহা আক্তার শিশু শ্রেণিতে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসত ঘরের জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই লিটন মিয়ার। শ্রমিকের কাজ করে পাঁচ সদস্যের সংসার চালান তিনি। ছোটবেলা থেকেই ইসরাত পড়াশোনায় ভালো।

তার ইচ্ছা একদিন বড় ডাক্তার হবে। পরিবারের অভাব দূর করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে। ডাক্তারির স্বপ্ন পূরণের জন্য পড়তে চায় বিজ্ঞান বিভাগে কিন্তু যেখানে নুন আনতে ফুরায় সেখানে ডাক্তার হওয়ার জন্য পড়ালেখা করা স্বপ্নই থেকে যাবে।

ইসরাত জাহান বলে, আমার ইচ্ছা ভালো একটি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। চিকিৎসক হতে চাই, এরপর বিয়ে করব। কিন্তু সংসারে অভাবের কারণে আমার সেই ইচ্ছা হয়তো পূরণ হবে না।

তার বাবা লিটন মিয়া বলেন, যা রোজগার করি তাতে তিন বেলা খাবার খেতেই কষ্ট হয়। এরপর পড়াশোনা চালানো কষ্ট।’ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চিন্তা তাঁর। মা মোছা. নাছিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘মাইয়াডায় পড়তে চায়। কিন্তু আমাগো পড়ানোর মতো সাধ্য নাই।

আরও পড়ুন: শ্যালক ও অভিভাবকবৃন্দ

পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ইসরাত জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসরাত জাহান খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। ওর নম্বর দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। পারিবারিক তদারকি ছাড়া নিজের মতো পড়াশোনা করে সে পদার্থ বিজ্ঞানে-১০০, জীববিজ্ঞানে-১০০, রসায়ন বিজ্ঞানে-৯৮ ও উচ্চতর গণিতসহ সব বিষয়ে ৯০ নম্বরের ওপরে নম্বর পেয়েছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ইসরাতের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী যেন অভাবের কারণে ঝড়ে না পড়ে।


সর্বশেষ সংবাদ