শিক্ষার্থীদের বাবা-মা সেজে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০১:১৬ PM , আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০১:৩২ PM
যশোর সদর উপজেলার নারাঙ্গালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দত্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থীর বাবা-মা ‘পরিবর্তন’ করে উপবৃত্তি এবং কিডস অ্যালাউন্সের টাকা তোলা হয়েছে। শিক্ষকরাই এই অপর্কমের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি বাবদ নয়শ’ এবং কিডস অ্যালাউন্স বাবদ এক হাজার টাকা করে তোলা হয়েছে। এর বাইরে যেসব শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে তাদের নামেও তোলা হচ্ছে এই টাকা।
এটি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা তদন্তপূর্বক জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, নারাঙ্গালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব হোসেন, ফাহিম হোসেন, মো. তুহিন, মো. জাহিদুল, রিফাদ ও দ্বিতীয় শ্রেণির লিয়ার বাবা-মার নাম পরিবর্তন করে অন্য লোককে বাবা-মা সাজিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে উপবৃত্তি এবং কিডস অ্যালাউন্সের হাজার হাজার টাকা। এছাড়া, টাকা তুলে নেয়া হয়েছে দত্তপাড়া স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী (রোল নম্বর ২৭) সরোয়ার হুসাইনেরও।
নারাঙ্গালী স্কুলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্যানুযায়ী, পাঁচজন প্রথম এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রথম শ্রেণির ৩৩ রোল নম্বরধারী সজিব হোসেনের মায়ের নাম শাপলা। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৭৩-৩৩১২৮৪। রিমা নামে একজনকে ‘আন্টি’ উল্লেখ করে ০১৮৫৫-২২৮৫৮৬ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার উপবৃত্তি ও কিডস অ্যালাউন্সের টাকা তুলে নেয়া হচ্ছিল। একইভাবে, ৩৪ রোল নম্বরের ফাহিম হোসেনের পিতার নাম পলাশ। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৮২৫-৫৫২৮৪৮। অথচ বাবু নামে একজনকে বাবা দেখিয়ে ০১৪০৭-৮৩১৭৯৮ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ৩৯ রোল নম্বরের মো. তুহিনের বাবার নাম সেলিম। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৭৩-৪৮৫১১৪। অথচ মিনারা বেগম নামে এক নারীকে মা সাজিয়ে ০১৬৪৩-৭২৬২১৮ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে সব টাকা। ৪১ রোল নম্বরের মো. জাহিদুলের মায়ের নাম নুরুন্নাহার। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৮৮৭-০২১৪৮৭।
কিন্তু জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে বাবা সাজিয়ে ০১৮৫৮-৪২৯০৩৪ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপবৃত্তি ও কিডস অ্যালাউন্সের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ৩৭ রোল নম্বরের রিফাদের পিতার নাম সুলতান। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৪০-৪৬৮৮৬৯। অথচ কুদ্দুস নামে আরেকজনকে বাবা সাজিয়ে ০১৮২০-৯২৫১৫৯ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯ রোল নম্বরের লিয়ার পিতার নাম লিপু। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৯৮-৩৯৩৫৩৬। অথচ তার টাকা তোলা হচ্ছে ০১৮৬৮-৫৫৭৭৫৫ নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।
এছাড়া, নারাঙ্গালী স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া প্রথম শ্রেণির ২৪ রোল নম্বরধারী মো. ইয়াছিন, ৪ রোল নম্বরের সিয়াম হোসেন, ৮ রোল নম্বরের মো. আব্দুল্লাহ, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯ রোল নম্বরের সঞ্চিতা, ৩২ রোল নম্বরের মিম, তৃতীয় শ্রেণির ২৪ রোল নম্বরের সাকিব, ২৫ রোল নম্বরের সাদিয়া ও ২৬ রোল নম্বরের ঊর্মির নামেও উপবৃত্তি এবং কিডস অ্যালাউন্সের টাকা তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নারাঙ্গালী স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা জানান,‘করোনার সময় প্রধান শিক্ষিকা তার মতো করে সবকিছু করেন। তাদের সাথে কোনো কিছু শেয়ার করেননি। ফলে, এমনটি হয়েছে।’
আর প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন,‘সবকিছু সহকারী শিক্ষকরা করেছেন। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। এর দায়দায়িত্ব আমার না।’ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন কিনা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
দত্তপাড়া স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ২৭ রোল নম্বরের সরোয়ার হুসাইনের টাকা উত্তোলন করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের স্ত্রী নাসিমা। নাসিমার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৬৩-৫৬৬৮২২। তার বাড়ি যশোর শহরতলির খোলাডাঙ্গা গ্রামে। অথচ সরোয়ার হুসাইনের মায়ের নাম সাহিদা আক্তার। তার নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৩৯-২১৯৭৪২। এই পর্যন্ত এক হাজার নয়শ’ টাকা তোলা হয়েছে সরোয়ারের নামে।
এ বিষয়ে জানাজানি হলে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। এরপর তিনি সরোয়ারের পরিবারকে গত ১৬ নভেম্বর এক হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন,‘দু’টি স্কুলে উপবৃত্তি জালিয়াতির বিষয়টি অভিভাবকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। দত্তপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। নারাঙ্গালী স্কুলের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন,‘অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’