চট্টগ্রামে  জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে সংহতি সমাবেশ

জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে সংহতি সমাবেশ
জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে সংহতি সমাবেশ   © টিডিসি ফটো

৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের রাজধানী গ্লাসগোতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী চারটি মূল দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলো হলো: (১) কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করা (২) উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া (৩) জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করা এবং (৪) জলবায়ু উদ্বাস্তু এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি ও ধ্বংসের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা। বিশ্ববাসীর প্রতি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

আজ (৮ নভেম্বর)  চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সিআরবি চত্ত্বরে যৌথভাবে সংহতি সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বেসরকারী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশ, এডাব চট্টগ্রাম, ক্যাব-চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্ম জোট (ক্লিন) ও এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে দুর্যোগের সংখ্যাও ভয়াবহতা দুটোই বেড়ে গেছে। আর এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। গত ২০ বছরে যে সব দেশ জলবায়ু দুর্যোগ আক্রান্ত  প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলে লবণাক্ততা, খরা, বন্যা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে জীবিকা হারিয়ে প্রতিবছর পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।’

বক্তাগণ আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন নির্গমন ও তার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এ লক্ষ্য পূরণের  প্রতিশ্রুতি দিলেও চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও ভারতের মতো বড় নির্গমনকারী দেশ কোনো  প্রতিশ্রুতি  দেয়নি। ফলে মানবজাতি রক্ষার উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হবে। মানব জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য এসব দেশের লজ্জা পাওয়া উচিত।’

বক্তারা অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা,  প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু-বিপদাপন্নদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, ‘বাতাসে কার্বন নির্গমনের ৭২ শতাংশই আসে জ্বালানি খাত থেকে। তাই কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানিতে খাতে উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ৪০টি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু জার্মানি, জাপান, চীন, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়ামের মতো বড় বিনিয়োগকারী দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করার কোনো  প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এসব দেশের অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।’

আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিবেশবিদ, ডঃ ইদ্রিস আলী, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব ও সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের কো-চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুচ, জাসদের সভাপতি ও সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের কো-চেয়ারম্যান ডাঃ মাহফুজুর রহমান, সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক ও জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির, প্রশিকার উপ-পরিচালক অজয় মিত্র শংকু, শাহাদত হোসেন, পরিবেশ সংগঠক ইমতিয়াজ হোসেন, এসডিজি যুব গ্রুপের সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ইপসার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোহম্মদ আলী শাহীন, ঘাসফুলের সমন্বয়কারী যোবায়ের আহমদ, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় নাটিকা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন নাট্যধার শিল্পগোষ্ঠী।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence