জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে ভাগ করে নেয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০২:৩১ PM , আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০২:৩১ PM
বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে স্কটিশ পার্লামেন্টের কমিটি কক্ষে ‘অ্যা বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শিরোনামে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে এ আহবান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সঠিকভাবে সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ৬০ লাখ মানুষ রয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের আরও অতিরিক্ত ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা যোগ হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলা এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
কার্যকর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়নকে সমৃদ্ধি অর্জনের মূল চাবিকাঠি উল্লেখ করে এমসিপিপি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল২০ (ভি২০) সভাপতি শেখ হাসিনা একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে অবশ্যই ব্যাপক ভিত্তিক এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) পেশ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চাভিলাষী প্রভাব প্রশমন প্রয়াস ছাড়া শুধু অভিযোজন ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোকে ধীর, বন্ধ ও পাল্টানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
আরেকটি প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এই পরিমাণ অর্থায়ন বিদ্যমান ওডিএ’র (অফিশিয়াল উন্নয়ন সহায়তা) অতিরিক্ত ও বিভিন্ন জলবায়ু অর্থায়নের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। অভিযোজন ও প্রভাব প্রশমনের ক্ষেত্রে জলবায়ু অর্থায়ন বিতরণে মধ্যে ৫০:৫০ অনুপাত থাকা উচিত।
সবশেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে সবুজ প্রযুক্তি প্রসারের পরামর্শ দেন, যাতে মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানবজাতির সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় হুমকি। যদিও আমরা বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে ০.৪৭ শতাংশের কম অবদান রাখি। চরম তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা ও খরা, অধিকতর তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন, নদীভাঙন, সমুদ্রের অম্লকরণ বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে নষ্ট হয়ে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দশকে এই পরিমাণ ৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্কটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছলে স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। এ সময় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা এবং সিভিএফ দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।