কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক বলছে টিআইবি

দেশের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করা অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক, দুর্নীতিবান্ধব ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) পরিপন্থী জানিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি মনে করে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান সম্পদ ও আয়বৈষম্য নিরসনে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না রাখা হয়নি। বরং অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করায় সম্পদ ও আয় বৈষম্য আরো বাড়বে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে টিআইবি এসব কথা বলেছে।

টিআইবি বলছে, কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগপ্রাপ্ত খাতে দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সৎপথে এসব খাতে আয় ও সম্পদ আহরণের সুযোগ ধূলিসাৎ হবে। যার প্রভাবে দুর্নীতির বিস্তৃতি ও গভীরতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে সংকটাপন্ন ব্যাংক খাতের সংস্কারে কার্যকর কোনো পথনির্দেশ বা পরিকল্পনা না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও দফায় দফায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এসেছে একের পর এক সরকার। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন ও দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার পরিপন্থী হলেও এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এই অনিয়মকে বাদ না দিয়ে বরং এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার জমি কেনাকেও যোগ করা হয়েছে।

এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করা যাবে। তদুপরি এবার প্রথমবারের মতো এই অবৈধটাকে পাঁচ বছরের জন্য বৈধতার প্রস্তাব করা হলো। অর্থাৎ দুর্নীতির মহোৎসব ও বিচারহীনতাকে পাঁচ বছরমেয়াদি লাইসেন্স দেওয়া হলো।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি চরম হতাশাজনক হলেও প্রশ্ন ওঠে, তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো কি কেউ নেই সরকারি অঙ্গনে? কি হবে এই অঙ্গীকারের? এ উদ্যোগ যেমন অসাংবিধানিক তেমনি অনৈতিক, বৈষম্যমূলক এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের নামান্তর। ’

তিনি আরো বলেন, কেবল ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অবৈধটাকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ সমাজে বৈধভাবে উপার্জন করাকে নিরুৎসাহিত করা, যা অন্যদিকে চরম বৈষম্যমূলক, কারণ সৎপথে উপার্জনকারীকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। দুর্নীতির কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে তা সরকারকে অনুধাবন করতে আহ্বান জানাই।

ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতে জনগণের করের টাকায় নতুন করে বাড়তি প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কি কোনো ভূমিকা রাখবে এবং তা কীভাবে, সে ব্যাপারে সরকার বা যাদের চাপে এটা করা হলো তাদের কোনো বিবেচনা রয়েছে এমন ইঙ্গিত নেই।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) জন্য কোনো বরাদ্দ না করায় হতাশা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির প্রেক্ষিতে বাজেটে কোনো বরাদ্দ না রাখাটা একেবারেই অযৌক্তিক এবং উল্টো পথে হাঁটার শামিল।


সর্বশেষ সংবাদ