সজাগ ডাকসু নেতারা: সপ্তাহ না পেরোতেই এত কিছু!
- নুর হোসেন ইমন
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৯, ০৭:২৯ PM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯, ১০:২০ PM
ধূমপান ও মাদকমুক্ত টিএসসির ঘোষণা; ছাত্রত্ব না থাকাদের হল ছাড়তে নোটিশ; খাবারের দাম কমানোর সঙ্গে বাকি খাওয়া নিষেধ; বহিরাগতমুক্ত রিডিং রুম পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্সের ফি কমানো- কী হয়নি এই ৬ দিনে? দীর্ঘ ২৮ বছরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা করতে পারেনি, সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের পর সেটিই যেন করে দেখালো ভিপি-জিএসরা। যদিও এর ফল পেতে আরো কয়েকদিন লেগে যাবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
তথ্যমতে, চলতি মাসের ১১ তারিখ অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের মধ্যে ২৩ পদ পায় ছাত্রলীগ। ভিপি ও সমাজসেবা পদে নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ আনলেও যেকোন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার ঘোষণা দেন ভিপি নুরুল হক নুর। আর ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে জয়ী নেতারা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করার নানা অঙ্গীকার করেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ইতোমধ্যেই ডাকসুর সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন ছাত্র নেতারা। এসব সমস্যা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তা সমাধানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন সম্পাদক পদে দায়িত্ব নেয়া নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সংগঠনের ছাত্র নেতাদের নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। আর ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে জয়ী রাব্বানী ও সাদ্দামরা কাজ করছেন আলাদাভাবে।
বুধবার ডাকসু নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে অবস্থিত খাবারের দোকানের মান বৃদ্ধিসহ মূল্য কমানোর বিষয়ে অনুষদের ডিন প্রফেসর সাদেকা হালিমের সাথে কথা বলেন ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এসময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, আতাউল্লাহ, মশিউর রহমানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে অবস্থিত দোকানটির খাবারের দাম বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর দামের সমান। তাই এটির খাবারের দাম কমানো এবং খাবারের মান উন্নয়নের জন্য অনুষদের ডিন এবং দোকানের মালিকের সাথে কথা বলি। উভয়পক্ষ বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান করার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে ডাকসুর এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির মাস্টার্সের অতিরিক্ত ভর্তি ফি কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইনিস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. শামছুদ্দিনের সাথে মত বিনিময় করেন। বিষয়টি আলোচনা করে যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ভর্তি ফরমের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ রোধে কাজ করছেন ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী, অনিয়মিত শিক্ষার্থী ও ঢাবির শিক্ষার্থী নন সবার জন্যই ইনিস্টিটিউটের ফরমের মূল্য ৭শ টাকা করে নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য তা কমিয়ে ২শ টাকা করার প্রস্তাব দেন তিনি। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফর্ম বিক্রি করা স্থগিত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মাদক দূরীকরণ, পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব রয়েছেন সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের ভোগান্তি কমানোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করছেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ধূমপানমুক্ত টিএসসি ক্যাম্পাস গড়াতে কাজ করা শিক্ষার্থীরা অনেক অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে কয়েকটা নির্দিষ্ট গ্রুপ নিয়মিত গাঁজা সেবন করে। আমরা সরেজমিনে প্রদক্ষিণ করে এসব বিষয়ের সত্যতা পাই। যারা এসব কর্মকাণ্ড সাথে জড়িত তাদের আমরা ভদ্রভাবে এখান থেকে চলে যেতে অনুরোধ করি। ক্যাম্পাসকে সুন্দর করার দায়িত্ব আমাদের। এটাই সবসময় সচেষ্ট থাকব। যারা পরিবর্তনের পক্ষে, তারা এ কাজে পাশে থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস।
এর আগের ২৩ তারিখ দায়িত্ব গ্রহণকালে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত নেতাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। এরপর থেকেই বিভিন্ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত সদস্যরা তাদের আওতাধীন ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেছেন।