ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় যে ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৬:২৬ PM , আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫, ০১:০২ AM
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ব্যস্ত শহরের রূপ বদলে ফাঁকা হতে শুরু করেছে, কেননা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনদের কাছে ছুটে চলেছে হাজারো মানুষ। এতে ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে রাজধানী। ফাঁকা ঢাকায় কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেই জন্য রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, বিজয় সরণি, খামারবাড়ী এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ ও র্যাবের গাড়ি টহল দিচ্ছে। তবে সেটি দীর্ঘ সময় পর পর। দিনের বেলায় তেমন চেকপোস্ট চোখে না পড়লেও রাতে বিভিন্ন সড়কে চেক পোস্ট বসায় বিভিন্ন বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম দেখা যায়।

ঈদ উপলক্ষে সম্ভাব্য যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত সক্রিয় রয়েছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ, পশুর হাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাটসহ সব স্পর্শকাতর স্থানে নজরদারি এবং টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে, যাতে করে শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টি না হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ জামাত, পশুর হাট ও পরিবহন টার্মিনালকে ঘিরে আলাদা নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট, মার্কেট ও আবাসিক এলাকায় পুলিশ মোবাইল টিমের উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে। বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকায় চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
শুক্রবার (৬ জুন) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, রাতে ৫০০ এবং দিনে ২৫০টি পেট্রোল টিম মাঠে থাকবে। গাড়ি পেট্রোল, ফুট পেট্রোল এবং মোবাইল পেট্রোল একযোগে কাজ করবে। এমনকি কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদেরও দায়িত্ব ভাগ করে মাঠে নামানো হয়েছে। নগরবাসী যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই প্রস্তুতি।

ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, চেকপোস্ট ও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শহরজুড়ে সুইপিং, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক, এটিএম বুথ, মার্কেট ও আবাসিক এলাকাগুলোর নিরাপত্তাও আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে।
এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ র্যাব সদস্য সাদা ও পোশাকধারী অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট, বাড়ানো হয়েছে টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সম্ভাব্য সব ধরনের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে র্যাবের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই র্যাব সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।’
অন্যদিকে সেনাবাহিনীও রয়েছে প্রস্তুত। রাজধানীর বাইরেও টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়াও এক হাজারের বেশি আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও বিভিন্ন টার্মিনালে।

ঈদে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৃহস্পতিবার গাবতলী পশুর হাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইনশাআল্লাহ খুবই ভালো থাকবে। আপনারা ছুটিতে চলে গেলেও আমাদের ইউনিফর্ম বাহিনী থেকে যাচ্ছে। কোনো অসুবিধা হবে না।’
সরকারি সূত্রে আরও জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বিজিবি। তারা অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগ ও সাইবার ইউনিট যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে সর্বদা সতর্ক থাকবে।