চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন সহিংসতা: নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা

বিক্ষোভ সমাবেশ
বিক্ষোভ সমাবেশ   © টিডিসি ফটো

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতির পাশাপাশি দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’। আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন তারা। 

এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী সংস্কারের কমিশনের সদস্য সুমাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে  ভয়াবহ ডাকাতির শিকার হাওয়া এই ঘটনা শুধু লুটপাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বরং যাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী এ ঘটনায় নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালংকারসহ সর্বস্ব লুট করা হয়েছে।  এবং দুই নারী যাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তত একজন নারী যাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাসটি প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ডাকাতদের দখলে ছিল, যা নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে গেলে, ঘটনাস্থল নির্ধারণ নিয়ে দুই থানার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং সহকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বড়াইগ্রামের ওসি সিরাজুল ইসলামের ভাষ্যমতে ধর্ষণের ব্যাপারে তিনি একেবারেই অবগত নন এবং এরকম কোনো ঘটনা তার কর্ণগোচর হয়নি। আর অপরদিকে মির্জাপুরের ওসির ভাষ্য, ‘ধর্ষণের বিষয়ে অনেকে বলছেন কিন্তু এ বিষয়ে কিছু জানা নেই আমার।’

‘এই সম্পূর্ণ ঘটনায় নাটোর জেলা পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা ধর্ষণের বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না, এবং এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অথচ বাসের যাত্রীরা জানিয়েছেন, তারা থানায় অভিযোগ করতে গেলে দুই থানা-নাটোরের বড়াইগ্রাম এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর-একে অপরের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। ফলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হয়েছে।’

জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আপামর জনতার মনে প্রশ্ন উঠছে, তারা কি ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, নাকি প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে? এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দেশের যাত্রী নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো ব্যবস্থার দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও দুর্নীতির একটি বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।

তদন্তের জন্য আলাদা টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা সাধারন নাগরিক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন গাফিলতির চরম নিন্দা জানাচ্ছি। একইসাথে, রাতে যাত্রীবাহী বাসগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে বাসগুলোর মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা, জিপিএস ট্র্যাকিং ও পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্ট নিশ্চিত করাসহ যৌন সহিংসতার অভিযোগে দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের জন্য আলাদা টাস্কফোর্স গঠনের দাবি প্রকাশ করছি। সর্বোপরি, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান করছি, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ