ব্যাটারিচালিত রিকশার সমস্যা সমাধানে ৮ সুপারিশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী  © সংগৃহীত

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সমস্যা নিরসনে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১’-এর খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করাসহ ৮টি সুপারিশ জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

সমিতির অন্যান্য সুপারিশগুলো হলো বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার বডি মডিফাই করে ব্রেক ও গতির সমতা এনে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিমুক্ত নিশ্চিত করে সার্টিফাইসহ নিবন্ধন নিতে হবে; সড়কের সক্ষমতা বিবেচনা করে সিলিং নির্ধারণ করে দেশের সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে, বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণে তাদের আওতাধীন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন দিতে হবে; প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার চালককে ন্যূনতম ১ সপ্তাহের সড়ক আইন-কানুন, ট্রাফিক চিহ্ন, সড়কে মোটর রিকশা চলাচল পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারীদের নামমাত্র ফি নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। হুট করে গ্রাম থেকে এসে প্রশিক্ষণহীন কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন রিকশাচালকরা

এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাটরিচালিত রিকশায় ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে জিপিএস লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। জিপিএস ট্যাকিংয়ের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীর প্রধান সড়ক, দেশের হাইওয়ে বা উপজেলা ও পৌরসভার প্রধান সড়কের যেটুকু অংশ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে সেই সড়কে প্রবেশ করা মাত্র জিপিএস এর মাধ্যমে ট্রাফিক বিভাগ অটো জরিমানা আদায় করতে পারবে— এমন পন্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে; ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা জাতীয় মহাসড়কে চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে; জরুরিভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে প্রতিটি এলাকার নিবন্ধন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতামত ও যাত্রী সাধারণের সঙ্গে গণশুনানি করে এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, দেশের সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স প্রদান করা গেলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে দেশে ইজিবাইকের বিস্তার লাভ করলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ খাত নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নানান ফোরামে প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সারাদেশে ৪০ লাখ অটোরিকশা থেকে দৈনিক ১১০ কোটি টাকা বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি হয়েছে। এই চাঁদাবাজীর কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক, নগর-বন্দরে মোটরচালিত অটোরিকশা দৌরাত্ব বেড়ে চরম আকার ধারণ করেছে। পতিত আওয়ামী লীগের অনেক এমপি, মন্ত্রীও এই অবৈধ অটোরিকশা পরিচালনা করে অবৈধ চাঁদাবাজিতে যুক্ত ছিলেন, তাই এ খাতের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

আরও পড়ুন: সংশোধিত ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে পাঁচ বাহিনীর

তিনি বলেন, অবাধে আমদানি, স্থানীয় গেরেজে সহজলভ্য ভাবে তৈরি করে সহজে রাস্তায় নামানোর অবাধে সুযোগ থাকায় এবং দেশে অন্যান্য খাতে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, স্বল্পপুঁজিতে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ অটোরিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। এতে কৃষি খাতে শ্রমিক সংকটসহ কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রশিক্ষণবিহিন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের হাতে এসব অটোর স্টিয়ারিং এর কারনে সড়ক নিরাপত্তায় ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, সরকার ২০২১ সালে থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুুষ্টু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১ নামে একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণ করে। অথচ করোনা সংক্রমণে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুবাধে ২০২১-২০২২ সালে প্রায় ৮ লাখ হারে দুই বছরে ১৬ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ১০ লাখ হারে ২০ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামে। সাথে সাথে সারাদেশে এসব যানবাহনের কারণে সৃষ্ট যানজট ও দুর্ঘটনা দ্বিগুণ হলেও অদৃশ্য কারণে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেনি। ভারত থেকে একচেটিয়াহারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, অটো টেম্পু, হিউম্যান হলার আমদানি অব্যহত রাখার স্বার্থে তৎকালীন সরকার এই নীতিমালা থেকে সরে এসেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে এই নীতিমালা প্রনয়ণের দাবী জানান।

আরও পড়ুন: ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, রিকশা-ব্যাটারিরিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলার যানবাহন মালিক ও চালক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিক মিয়া, চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক চার্জাররিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সানাউল্লাহ চৌধুরী, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ