বিচার করে আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস  © সংগৃহীত

‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে। তবে তার আগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

‘তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। আমরা রাজনৈতিক ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) টাইম ম্যাগাজিনে ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তাদের দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিয়ে এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরে বললাম, ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছ, তোমার বন্ধুরাও জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। অন্যদিকে হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে সাড় ৩ হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছিল।’

আরও পড়ুন: মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে আবার কথাও বলছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে বাংলাদেশে ফেরত চাওয়া হয়েছে। যদিও কেউ বিশ্বাস করে না যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে রাজি হবেন।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে ট্রাম্পের পোস্টের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারব বলে আত্মবিশ্বাসী। এ ছাড়া ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না, আমরা একটি ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।’

দেশকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশের আলেমরা

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের হাজার কোটি ডলার পাচারের অর্থ উদ্ধারে কাজ করবেন বলে টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য ‘ব্লক মেকানিজম’ শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং প্রতিটি দেশ এসব অর্থ ফেরত পেতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় প্রভাবশালী মহল বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে লবিং করছে বলে ধারণা বিরাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, সংস্কারপ্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ চলছে, কিন্তু এটি রাষ্ট্রপতি নাকি সংসদীয় পদ্ধতির দিকে যাবে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে শেখ হাসিনার নামে করা মামলার বাদী গ্রেফতার

বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি একটি খারাপ ও স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ। এ জন্য তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা ও রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কোনো তারিখ দিইনি। প্রথমে আমাদের রেললাইনগুলো ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। সংস্কারই পুরো বিপ্লবের মূল। এ কারণেই আমরা বিপ্লব-পরবর্তী একে আমরা বাংলাদেশ ২.০ বলছি।’


সর্বশেষ সংবাদ