বিএনপি নেতার ছুরিকাঘাতে যুবদল নেতা নিহত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ AM , আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ AM
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে খাল দখল করে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এক যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবদল নেতার নাম মো. ইউনুস আলী ওরফে এরশাদ (৪০)। তিনি চরফকিরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এবং একই ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি উপজেলার দিয়ারাবালুয়া গুচ্ছ গ্রামের রইছুল হকের ছেলে এবং পেশায় একজন নৌকার মাঝি এবং তিন সন্তানের জনক।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিহতের ভগ্নিপতি মো. জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, গত ৬-৭ মাস আগে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী (পলাতক) আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুছাপুর ক্লোজারের পশ্চিমের খালটি ইজারা দেয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খালটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা। বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ও বিএনপি নেতা বাবরের নির্দেশে স্থানীয় সমীর খাঁন, জাবেদ,ওবায়দুল্যাহ খানসহ ১০-১৫ জন দায়ের খালে আমাদের মাছ ধরার জালটি কেটে তাদের জাল বসিয়ে দেয়। খাল দখলকারীরা বলে আওয়ামী সরকার এখন নেই তাদের সময়ের দেওয়া ইজারা বাতিল। এসব বলে তারা খালটি দখলে নেয়।
ভগ্নিপতি জয়নাল আবেদীন আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমিসহ আমাদের পরিবারের আরও চারজন সদস্য আমাদের জাল কেটে খাল দখল করে মাছ ধরার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করতে চরফকিরা ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রাম ঘাটে যাই। সেখানে স্থানীয় নেজাম (৪২), তার ছেলে সুজন (২৫) ও তারেক (২৬) এবং তাদের আত্মীয় তারেক (২৬), বাবলু (২৭), রুমনের (২৫ ) সঙ্গে আমাদের বাগবিতন্ডা বেঁধে যায়। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে। পরে নিজাম ডাকাত ও তার লোকজন ইউনুছ আলী এরশাদকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করলে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও চারজনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।
পরে গুরুতর আহত এরশাদকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে ফেনীতে তার মৃত্যু হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান ও তার ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মানছুরুল হক বাবরের নির্দেশে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
চরফকিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী বিপ্লব বলেন, বৃহস্পতিবার গুচ্ছ গ্রামের ঘাট এলাকায় একটি ভিটিতে মাটি ফেলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে মুছাপুরের খাল দখলের বিষয়টিও সম্পৃপ্ত।
নিহতের ছোট ভাই সামছুদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে উপজেলার গুচ্ছ গ্রামের সুভাষ নামে এক ব্যক্তির থেকে ১ ডিসমিল জমি তিন বছরের জন্য বন্ধক নেয় আমার বড় ভাই এরশাদ। বৃহস্পতিবার সকালে ওই জায়গার ওপর মাটি ফেলে ভিটি বাঁধার কাজ শুরু করে আমার ভাইয়েরা। তখন সুজন, জাবেদ, জিয়া খাঁন, সমীর খাঁন সেখানে আক্রমণ চালায়। এতে আমার চার ভাই আহত হন। বড় ভাইকে তলপেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ছাড়া বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপি নেতা শাহজাহান ও তার ভাই বাবরের নির্দেশে মুছাপুরের দায়ের খাল দখল করে আমাদের মাছ ধরার জাল কেটে হামলাকারীরা দখল করে।
নিহতের স্বজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমিও আমার ছোট ভাই বাবর কোনোভাবেই জড়িত না। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কোনো নেতা ষড়যন্ত্র করে আমাদের নাম বলাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে বাবরের মুঠোফোনে কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।