বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী জার্মানি

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী জার্মানি 
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী জার্মানি   © সংগৃহীত

ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানি। অনেকের কাছে স্বপ্নের দেশ এটি। সেখানে পাড়ি দেওয়ার জন্য চেষ্টার কমতি থাকে না তৃতীয় বিশ্বের মানুষের। দেশটিতে জনসংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকায় কর্মী ঘাটতিতে পড়েছে। এ কারণে দেশটি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। 

পরিবহন, উৎপাদন, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল, আইটিসহ বিভিন্ন খাতে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির প্রতিবছর অন্তত চার লাখ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সে দেশের ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি।

দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে ২০২৪ সালের ১ জুন থেকে জার্মানি অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও সহজ করেছে। 

কর্মী সংকট কাটাতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এ অঞ্চলে জার্মান ভাষা শিক্ষার প্রচারণা চালাচ্ছে দেশটি।

চলতি মাসের শুরুর দিকে জার্মান সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কোটার ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তারা।

শুক্রবার ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের জন্য বছরে ভিসার সংখ্যা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯০ হাজার করার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ দিল্লি সফরকালে এ ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে। পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য দুই দেশে চলাচল আরও বাড়াতে একটি অভিবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই বছর আগে ভারত ও জার্মানি।  তবে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির এমন কোনো চুক্তি নেই।

আরও পড়ুন: ৩ শর্ত থাকলে সহজেই চাকরি মিলবে জার্মানিতে

জার্মানিতে বাংলাদেশের সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমরা জার্মানির সঙ্গে চুক্তির জন্য যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি না থাকায় আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কোটা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কর্মী পাঠাতে চুক্তি থাকা আবশ্যক নয়। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্যোগ নিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি এজেন্সি ও দালালদের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।’

নয়াদিল্লিয় গ্যেটে ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্রি-ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড ট্রানজিশন ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রকল্প নিয়মিত ও নিরাপদ অভিবাসনে সহায়তা করতে কাজ করছে। এ প্রকল্প আগামী বছর থেকে বাংলাদেশেও কাজ করবে।

গ্যেটে ইনস্টিটিউটের প্রকল্প সমন্বয়কারী সোনালী সাহগল বলেন, ‘প্রি-ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড ট্রানজিশন ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি গত বছর ভারতে শুরু হয়েছে। আমরা এখন জার্মানিতে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য অনলাইন অফার শুরু করছি।’

তিনি আরও বলেন, আগ্রহীরা যেকোনো সময় ঢাকার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

যারা পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে স্থায়ীভাবে জার্মানিতে অভিবাসন করতে চান, তাদের দৈনন্দিন জীবন ও কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করে প্রকল্পটি। এতে দেশ ছাড়ার আগেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি জার্মানিতে পৌঁছার পর প্রথমদিকে অভ্যন্তরীণ সহায়তা দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো অভিবাসীদের জার্মান সমাজে একীভূত হতে সহায়তা করা।

Germany Inner

দক্ষ কর্মীদের কাজের সুযোগ রয়েছে জার্মানিতে

জার্মান ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি জার্মানিতে বাস করছেন। তবে জার্মানির শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিমার আওতায় আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ প্রবাসী কাজ করেন হসপিটালিটি খাতে। অন্যরা বাণিজ্য, প্রকৌশল এবং তথ্য ও যোগাযোগ খাতে কর্মরত।

ইউরোপীয় শ্রম কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানিতে বর্তমানে ৭০টিরও বেশি পেশায় জনবল-সংকট রয়েছে। 

যেসব খাতে দক্ষ কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা আছে, সেগুলোর মধ্যে নার্স, মেশিন ইঞ্জিনিয়ার, আইটি পেশাজীবী, অটোমোটিভ প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, গাড়িচালক ও নির্মাণ প্রকৌশলী অন্যতম।

জার্মানির ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিনে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষক শহিদুল ইসলাম কামরুল বলেন, স্বাস্থ্যসেবা, আইটি ও প্রকৌশল খাতে সুযোগ নিতে ‘বাংলাদেশিরা প্রথমে জার্মান ভাষার দক্ষতা বাড়াতে পারেন, কারণ অনেক নিয়োগকর্তা ভাষায় দক্ষতা চায়। জবসিকার ভিসার মাধ্যমে জার্মানিতে থেকে চাকরির জন্য আবেদন করা সম্ভব।’ এ ছাড়া ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামের সুযোগগুলোও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অফিশিয়াল জার্মান সংস্থাগুলোর মাধ্যমে যোগ্যতার স্বীকৃতি পেলে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। আর নেটওয়ার্কিং ও জব ফেয়ারগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

রিক্রুটিং এজেন্সি ইনফিনিটি এইচসিএমের চেয়ারম্যান শারমিন আফরোজ শুমি বলেন, ‘এক বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি, জার্মান ভাষায় দক্ষতা না থাকলে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে তেমন একটা সাড়া পান না। বি২ লেভেলের জার্মান জানলে নার্সিং বা কেয়ারগিভিংয়ের মতো পদে কাজ পাওয়া অনেক সহজ হয়।’

আরও পড়ুন: জার্মানিতে পছন্দের চাকরি খোঁজার নতুন উপায় ‘অপরচুনিটি কার্ড’, থাকছে যেসব সুবিধা

তিনি আরও যোগ বলেন, ‘ভাষা শেখার পর আমাদের এজেন্সি আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, তবে অন্যান্য ধাপগুলোর কাজ পুরোটাই চাকরিপ্রার্থীকে করতে হয়।’

দক্ষ কর্মীদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও সহজ 
২০২৩ সালে শ্রম অভিবাসন আইন সংশোধন করা হয়েছে, যার প্রথম নতুন বিধান নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। জার্মান অর্থনীতিতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা মেটাতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও পেশাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই নতুন আইনের মাধ্যমে আরও সহজভাবে জার্মানিতে অভিবাসনের সুযোগ পাবেন। 

উদাহরণস্বরূপ, ইইউ ব্লু কার্ডের জন্য ন্যূনতম বেতনের পরিমাণ কমানো হয়েছে, যাতে যাতে আরও বেশি মানুষ এটি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। জার্মানিতে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য বা কর্মসংস্থান চুক্তির মেয়াদকালের জন্য ব্লু কার্ড দেয়া হয়।

সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও পেশাগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দক্ষ কর্মী হিসেবে বিবেচিত হন। তবে এর অর্থ এই নয় যে তারা শুধু নির্দিষ্ট পেশাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন। উপযুক্ত যোগ্যতা থাকলে তারা বিভিন্ন কাজে যোগ দিতে পারবেন।

এ ছাড়া যারা জার্মানিতে পেশাগত প্রশিক্ষণ নিতে বা চাকরি খুঁজতে ইচ্ছুক, তাদের নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence