বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

আন্দোলনে নাতিকে খুঁজতে গিয়ে গুলিতে হারালেন চোখ

নাতিকে খুঁজতে গিয়ে চোখ হারালেন গুলিতে
নাতিকে খুঁজতে গিয়ে চোখ হারালেন গুলিতে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোললে অংশ নিতে যান নেত্রকোনার মদন উপজেলার আবদুল বারেকের (৭৪) নাতি মেহেদী। আন্দোলন থামাতে মরিয়া পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ সময় মেহেদীকে খুঁজতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন বারেক। তার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘটনাটি গত ১৮ জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা বারেকের চিকিৎসা নিয়ে পড়েছে বিপাকে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ঠিক মতো চিকিৎসা না করাতে পারলে দুটি চোখই হারাবেন তিনি।

আব্দুল বারেক মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল গণির ছেলে। এক সময় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন এই বৃদ্ধ। তাঁর এক মেয়ে ও তিন ছেলে।

মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ছেলেরাও নিজ নিজ সংসার খরচ চালাতে ভ্যান চালান। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তারা বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার লড়াই করছেন। তবে চোখের অস্ত্রোপচারের মতো টাকা জোগাড় করতে পারেননি।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে নিহত রিকশাচালক ইসমাইলের ছেলের পড়াশোনা বন্ধ

জানা যায়, ১৮ জুলাই মদন উপজেলায় কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামে ছাত্র সমাজ। এক পর্যায়ে তাদের ওপর গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ২৫-৩০ জন আহত হন। আন্দোলনে যোগ দেওয়া নাতি মেহেদীকে (২০) খুঁজতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন বারেক। দ্রুত তাঁকে নেওয়া হয় মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। 

সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর চিকিৎসক জানান, ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। ২ অক্টোবর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি অপসারণ করতে হবে। তা না করলে বাঁ চোখটিও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। ইতোমধ্যে তাঁর ছেলেরা ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

এখন ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও নেই, চিকিৎসা খরচ ও ওষুধ কেনা তো দূরের কথা। স্বজনরা জানান, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারেকের জন্য কিছু সিভিট ট্যাবলেট ও চোখে দেওয়ার জন্য কয়েকটি ড্রপ দেওয়া হয়। প্রায় আড়াই মাস হতে চললেও আর কেউ সহায়তা করতে এগিয়ে আসেনি। প্রায়ই তীব্র ব্যথায় আর্তনাদ করেন এই বৃদ্ধ।

আব্দুল বারিক বলেন, আমার নাতি মেহেদী ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে গিয়েছিল, তারে ফিরাইয়া আনতে গিয়া আমি চোখে গুলি খাইছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নেতা বা কোনো অফিসার আমারে দেখতে আসেনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এখলাছ মিয়া বলেন, আব্দুল বারেক একজন খেটে খাওয়া মানুষ। চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুনেছি একটা চোখ তুলে ফেলতে হবে। আমি মনে করি, উনার চোখের চিকিৎসায় সকলের এগিয়ে আসা উচিত।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মদন উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন, পুলিশের গুলিতে আহত ২৭ জনের একটি তালিকা উপজেলা প্রশাসন কাছে ইতোমধ্যে জমা দিয়েছি। সেখানে আঃ বারেকের নাম রয়েছে। উনার চোখের অবস্থা খুবই নাজুক । তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে আহবান করছি।


সর্বশেষ সংবাদ