‘মাথা-বুক রক্তে ভিজে যায়, বাঁ চোখ চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি’

হাসিবুল হাসান জিসান
হাসিবুল হাসান জিসান  © সম্পাদিত

‘বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনী মেরুল বাড্ডা ইউলুপের দিকে এগোতে শুরু করে। তারা একের পর এক শটগান দিয়ে গুলি করছে। হঠাৎ একঝাঁক পাথরের মতো কিছু আমার পুরো মুখ ও বুকে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে ব্যথা শুরু হয়। মাথা-বুক রক্তে ভিজে যায়। আমি বাঁ চোখ চেপে ধরে মাটিতে পড়ে যাই। এরপর আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি ব্যথায় চিৎকার করছিলাম। সেখানে আমার বুক থেকে কয়েকটা গুলি বের করা হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে তারা আমাকে ব্র্যাকের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে আমার গলার কাছ থেকে একটা শটগানের পেলেট বের করা হয়। গলায় পতাকা থাকায় যেটা ভেদ করতে পারেনি।’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথোপকথনে এভাবেই আন্দোলনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান জিসান। জিসানের গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার নারুলী পশ্চিমপাড়া এলাকায়। ঢাকায় থেকেই তিনি পড়াশোনা করেন।

১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করছিলেন আন্দোলনকারীরা। এরই প্রেক্ষিতে বাড্ডা সড়কে নামেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয়রা। অন্যদিকে পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মুহূর্তেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে যায়। শুরু হয় গোলাগুলি।

সেই আন্দোলনে গুলিতে গুরুতর আহত হন হাসিবুল হাসান জিসান। গুলির আঘাতে তার বাঁ চোখের পেশি ছিঁড়ে যায়। অস্ত্রোপচারের পর এখন তার চোখে সিলিকন অয়েল দিয়ে রেটিনা আটকে রাখা হয়েছে।

সেদিনের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জিসান বলেন, ‘১৫ জুলাই রাত কেটেছে উৎকণ্ঠায়। খবর আসছিল ঢাবি, জাবিতে ছাত্রলীগ আমার ভাইবোনদের মেরেছে। রাতে হলগুলোতে কারেন্ট অফ করে দিয়ে নির্যাতন চলছিল। ১৬ জুলাই এর প্রতিবাদে আমরা ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করি। ১৮ জুলাই সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। আমি ক্যাম্পাসে আসি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেইন গেটের সামনে শিক্ষার্থীরা সবাই জড়ো হতে শুরু করে। আমিও গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

badda-6698d1103475e

গেটের সামনে থেকে একটি জাতীয় পতাকা ও লাল-সবুজ ব্যান্ড কিনি। এরপর সবাই মিলে স্লোগান দিতে থাকি। পুলিশও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ তারা একটু পিছিয়ে গিয়ে বন্দুক লোড করা শুরু করে। ফিরে এসেই আমাদের ওপর টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড মারে। আমরা সবাই ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেট লাগিয়ে দিই। এরপরও পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। ভেতরেও টিয়ার গ্যাস ও শটগান দিয়ে গুলি করে। চার-পাঁচ জনের পিঠে, মাথায় শটগানের পেলেট ঢুকে যায়।

আমারও ডান হাতে ও মাথায় ৩-৪টি পেলেট এসে লাগে। ক্ষত হয়ে গেল, একটু একটু করে রক্ত পড়ছিল কিন্তু টিয়ার গ্যাস মুখের ভেতর চলে যায়। আমার এক বন্ধু আমাকে নিয়ে ব্র্যাক মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আবার ফিরে আসি। তারা আমাদের লক্ষ্য করে পেটাতে শুরু করে এবং গালি দিচ্ছিল। তখন শিক্ষার্থীরাও পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করে, তাদের পাথর মারতে থাকে।

একপর্যায়ে আমরা সবাই ক্যাম্পাস থেকে বের হই। পুলিশও আস্তে আস্তে পেছাতে শুরু করে। কিন্তু তারা সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস চার্জ করছিল অনবরত। শিক্ষার্থীরা তখন ব্র্যাকের মেইন গেটের সামনে থেকে একটু এগিয়ে যায়। তারা শিক্ষার্থীদের ভিড়ের মধ্যে আবার টিয়ার গ্যাস মারা শুরু করে।

আমার অনেক বন্ধু ও জুনিয়রের চোখে-মুখে টিয়ার গ্যাস পড়ে। তাদের তখন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। পুলিশ এক পর্যায়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে যায় এবং অনবরত গুলি করতে থাকে। চোখের সামনে শিক্ষার্থীদের শরীর বেয়ে রক্ত ঝরছে। তাদের অন্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেদিন নিজ চোখে এক রণক্ষেত্র দেখেন জিসান। তার কাছে মনে হচ্ছিল ব্র্যাকের ক্যাম্পাস যেন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প। সাধারণ মানুষও তাদের জন্য পানি ও টুথপেস্ট নিয়ে আসছিল, যাতে টিয়ার গ্যাসে তাদের কোনো সমস্যা না হয়।

আরও পড়ুন: ‘আপনাদের তালা আমি ভেঙে দেব, তবে আমাদের বাঁচাতে হবে’

তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনী মেরুল বাড্ডা ইউলুপের দিকে এগোতে শুরু করে। তারা একের পর এক শটগান দিয়ে গুলি করছে। হঠাৎ একঝাঁক পাথরের মতো কিছু আমার পুরো মুখ ও বুকে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে ব্যথা শুরু হয়। মাথা-বুক রক্তে ভিজে যায়। আমি বাঁ চোখ চেপে ধরে মাটিতে পড়ে যাই। এরপর আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি ব্যথায় চিৎকার করছিলাম। সেখানে আমার বুক থেকে কয়েকটা গুলি বের করা হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে তারা আমাকে ব্র্যাকের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে আমার গলার কাছ থেকে একটা শটগানের পেলেট বের করা হয়। গলায় পতাকা থাকায় যেটা ভেদ করতে পারেনি। সেখান থেকে আমাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জিসানের শরীরে ৪৫টি শটগানের পেলেট প্রবেশ করে। কিছু পেলেট বের করা হয় কিন্তু তার চোখের কোনো চিকিৎসা দিতে পারছিল না। তার বাঁ চোখে চারটা পেলেট ঢোকে কিন্তু সেগুলো বের করতে পারছিলেন না। এরপর তাকে ভিশন আই কেয়ার হসাপাতালে নেওয়া হয়।

জিসান বলেন, সেখানে আমার চোখের অপারেশন হওয়ার পর আমি আমার খালার বাসা বনশ্রীতে যাই। আমার মা আমার এই অবস্থার কথা শুনে ১৮ জুলাই রাতে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর ২০ জুলাই আমার চোখের আরও একটি অপারেশন হয় এবং আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া হয়। মাথা নিচু করে খুবই সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হচ্ছে। 

২৩ জুলাই বিকেলবেলায় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। দেখি সাত থেকে আটজন আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তারা আমার মা ও খালাকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢোকে। এক পর্যায়ে তারা বলে আমাকে নিয়ে চিকিৎসা করাবে। মা তখন বলেন, ‘আমার ছেলের চিকিৎসা চলছে এবং তার ২০ জুলাই মেজর অপারেশন হয়েছে। সে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। আর আপনারা কারা?’ তখন তারা বলে যে তারা সিআইডির লোক। কিন্তু তাদের পরনে কোনো পোশাক-ব্যাজ ছিল না। এ সময় তারা আমার টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। হাফপ্যান্ট পরা অবস্থাতেই হাতকড়া পরিয়ে আমাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। আমার শারীরিক এই অবস্থার পরও তারা আমার ওপর নির্যাতন করে। 

সিআইডির হেডকোয়ার্টারে এনে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। বারবার শিবির ট্যাগ দিয়ে বলছিল, ‘বল কোথা থেকে ফান্ডিং আসে তোর?’ তারা আমার খালার বাসা থেকে পাওয়া নামাজ শিক্ষা বই দেখে বলছিল শিবিরের বই। আমি তাদের বলি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নেই। এটা বলার পরও নির্যাতন করে। এরপর আমাকে সিআইডির সেলে নিয়ে রাখা হয়। একই সেলে আরও দুজন ছিল।

সেখানের রাতগুলো কীভাবে যে কেটেছে, বর্ণনা করার মতো না। শুধু সেলের দরজায় তাকিয়ে থাকতাম আর দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতাম, ‘আল্লাহ, আমার মতো নিরপরাধীকে এনে এই জুলুম করছে, তাদের বিচার করিও। এই বিপদ থেকে রক্ষা করো, আমার পরিবারকে সাহস দাও।’

আমাকে সেল থেকে বের করে বসিয়ে রাখে আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। বিকেলে আবার সেলে ঢোকায়। আমার সেলের বাকি দুজনসহ অন্যান্য সেলের সবাইকে বের করে ছবি তোলে সিআইডির লোকেরা। আমাকে ছাড়া বাকি সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার পর তারা বলে যে আমাকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যাবে। তখন একটু সান্ত্বনা পাচ্ছিলাম যে থানায় নিলে আইনিভাবে হবে আমার বিষয়টা।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে কি শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ‘নোটেবল অ্যালামনাই’?

শারীরিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়া জিসান বলেন, ২৪ জুলাই মাঝরাতে আমাকে বাড্ডা থানায় নেওয়া হয়। যাওয়ার পথে আমি বারবার তাদের জিজ্ঞেস করছিলাম, আমাকে বাড্ডা থানায় নেওয়া হচ্ছে, আমার মাকে যেন জানানো হয়। সেখানে গেলে কি আমাকে আরও মারা হবে? উত্তরে তারা আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘টেনশন করো না, তুমি এমনিতেই অনেক আহত এবং তোমার মুখে অনেক ইনজুরি। তোমাকে মারবে না।’ তারপর বাড্ডা থানায় নিয়ে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। সঙ্গে সিআইডি অফিসাররাও আছে। ভেতর থেকে এক এএসআই এসে সিআইডি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ সে এসে আমাকে একটা লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়। আমাকে নিচে বসতে বলে। তখন সে ‘তোর কোনো যোগ্যতা আছে তোর আমার সামনে বসার?’ বলেই মারধর শুরু করে। এমন সময় বাড্ডা থানার ওসি এসে বলেন যে তারা থানায় এমন আহত ছাত্রকে রাখবেন না। এরপর সিআইডি অফিসাররা আমাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেয়। তখন ওই এএসআই আমাকে বলে, ‘শিবির করিস? তোকে দেখে নেব, তুলে নিয়ে আসব, দেখি তোর কোন বাবা বাঁচায়।’

সে রাতেই আবার আমাকে সিআইডিতে আনা হয়। একটি রুমে হাতকড়া পরানো অবস্থায় রাখা হয়। রাতেই জানতে পারি, আমার বিরুদ্ধে ১৯ জুলাই পুলিশের (পিবিআই) কর্মকর্তা হত্যা ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। অথচ আমি ১৮ জুলাই দুপুর থেকে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। অপারেশনের পর বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। একেকটি দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে বছরের মতো।

২৫ জুলাই দুপুরের দিকে আমাকে ডাকা হয়। সিনিয়র অফিসাররা আমাকে বলেন, ‘এখন যদি তোমাকে মামলা দিই, তাহলে দুই মাস তুমি জেলে থাকবে, যা তোমার চোখের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই তোমাকে কোনো মামলা দিলাম না। তুমি তোমার পরিবারকে ফোন দাও, আসতে বলো, আমরা তোমাকে ছেড়ে দেবো।’

আমি এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে। তারা আমাকে একটা মোবাইল ফোন দেয়। আমি মাকে কল দিয়ে বলি একটি টি-শার্ট আনার জন্য। মা আসেন। এরপর তারা আমাকে পরিবারের কাছে সোপর্দ করে। আমাকে এক আত্মীয়র বাড়িতে নেওয়া হয় কারণ যেখানেই ছাত্রদের খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নিজ বাসায় ফেরার পরও আতঙ্কে ছিলাম কখন এসে ধরে নিয়ে যায়। তবু চুপ থাকিনি। পরিবার নিষেধ করার পরও ঘরে বসেই আন্দোলনের খবর প্রচার করতে থাকি আর ভাবতে থাকি, যদি আবার বন্ধুদের সঙ্গে রাজপথে দাঁড়াতে পারতাম!

brac_quota_1

বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসিবুল হাসান জিসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বাঁ চোখে চারটি পেলেট ঢোকে, যার মধ্যে একটি অপটিক্যাল গ্রন্থির কাছাকাছি আটকে আছে। চিকিৎসক বলেছেন সেটি বের করা যাবে না কারণ বাঁ চোখের ৬ নম্বর পেশি ছিঁড়ে গেছে। আমরা চোখ বাঁ দিকে নাড়ানো যায় না। অপারেশনের মাধ্যমে চোখে সিলিকন অয়েল দিয়ে রেটিনা আটকে রাখা হয়েছে। এখনো পুরো মুখে ১২টির মধ্যে ৪টি, বুকে ১২টি ও বাঁ হাতে ১৪টি পেলেট রয়ে গেছে। চিকিৎসক বলেছেন তিন মাস পর চোখে আরও দুটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। গত জুলাই থেকে তিন মাস হিসাব করে সেই অপারেশন করতে হবে।

গত ৫ আগস্টের বিষয়ে জিসান বলেন, আমি ২৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট আমি বের হতে পারিনি। ওই দিন দুপুরে যখন খবর পাই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাফিয়ে উঠি, চিৎকার করে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি। আমার মা-ও আমাকে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। এ যেন খুশির কান্না। তারপর বন্ধুরা এসে আমাকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। তাদের কাঁধে ভর দিয়ে আমিও রাস্তায় নামি। আমার মা-ও আমাদের আনন্দে যোগ দেন। যখন বিজয় আনন্দ করি, ভুলেই গেছি যে আমি শারীরিকভাবে কতটা অসুস্থ।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিনের অত্যাচার-নির্যাতন-লুটপাট থেকে মোটকথা স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তি চেয়েছি। এই আন্দোলন যদিও কোটার জন্য শুরু হয়েছিল, কিন্তু আমাদের ওপর তার এই হত্যা-নির্যাতন করার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তাই রাজপথ ছাড়িনি আমরা। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে তাকে পালিয়ে যেতে হলো।

আরও পড়ুন: সিজিআই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের পাশের তরুণের বিষয়ে যা জানা গেল

এখন কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান, এ প্রশ্নের উত্তরে জিসান বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অপশাসন আর দেখতে চাই না এ দেশে। বড় দল হিসেবে বিএনপিও যদি এ ধরনের করতে চায়, তাও মানা হবে না। তাই আমি মনে করি দেশের সব রাজনৈতিক দল মিলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশটা গড়ে তুলুক। সমন্বয়কদেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে। তাদেরও দেশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে আসা উচিত।

জিসান মনে করেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যদি দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে চায়, তাহল আইনের মাধ্যমে আসতে হবে। তারা যদি জনগণের কাছে গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে।

তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন বাংলাদেশ পয়েছেন বা নতুন সরকারের হাতে দেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনো আশা দেখতে পারছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়া এই শিক্ষার্থী।

হাতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে আন্দোলন করে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, টাকার অভাবে তারা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না, এটা আমকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। এমনটা আশা করিনি বর্তমান সরকারের কাছে। আমি নাহয় সচ্ছল বা সহজে যোগাযোগ করতে পারব। কিন্তু যারা অসুস্থ-পঙ্গুত্ব বরণ করে তৃণমূলে কষ্টে জীবন যাপন করছে, তারা তো সরকারকে পাচ্ছে না। তাদের কাছেও কেউ যাচ্ছে না। এমনটা হতে থাকলে আন্দোলন বা আমাদের যে যুদ্ধ, তার প্রতি অবমাননা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ