জনপ্রিয় গণিতবিষয়ক লেখক চমক হাসানের মা আর নেই

মা ও বোনের সঙ্গে চমক হাসান
মা ও বোনের সঙ্গে চমক হাসান  © সংগৃহীত

জনপ্রিয় গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, অনলাইন শিক্ষাবিদ এবং প্রকৌশলী চমক হাসানের মা নওরাজিস আরা জাহান আর নেই। গত বৃহস্পতিবার দু’বছরের বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগে নিউমোনিয়া আর সেপটিক শকে তিনি মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

চমক হাসান লিখেছেন, আমার আম্মুটা আর নেই- এই অনন্ত মহাবিশ্বে এর চেয়ে বড় সত্য আমার জীবনে এখন আর নেই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আমার বাবা, আমাদের দুই ভাইবোন আর অসংখ্য স্বজন-পরিজন- শুভাকাঙ্ক্ষী-গুণগ্রাহীকে কাঁদিয়ে আম্মু আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার থেকে উদ্ভূত নিউমোনিয়া আর সেপটিক শকে তিনি চলে গেলেন।

গতকাল নিজ হাতে আম্মুকে কবরে শুইয়ে দিয়ে এসেছি। প্রচণ্ড কষ্টের ভেতরেও আমার এইটুকু সান্ত্বনা যে, শেষ দিনগুলোতে আমি আম্মুর কাছে থাকতে পেরেছি। দেশ থেকে যারা দূরে থাকে, তাদের কতজনেরই তো এই সৌভাগ্যটুকু হয় না। পরম করুণাময় আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন, তাঁর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা। 

আম্মুর শারীরিক অবস্থা অবনতির খবর পেয়েই বহ্নি আমাকে বলেছে- তুমি যাও, আমি দুই বাচ্চাকে সামলাচ্ছি। আমি তৎক্ষণাৎ টিকেট কেটে রওনা হয়ে গিয়েছি। এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতাল গিয়ে জেনেছি আম্মু ওঈট/ঐউট ওংড়ষধঃরড়হ টহরঃ-এ। ভিজিটর হিসেবে সধংশ-মড়হি পরে যখন আম্মুর কাছে গিয়েছি, আম্মুর তখন চোখ বন্ধ, মুখে ভেন্টিলেটরের (ঘওঠ) বড় মাস্ক, ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। কারও সাথে কথা বলার মতো অবস্থায় আর ছিলেন না। তবুও আমি আম্মুকে ডাক দিয়ে বললাম, আম্মু, আম্মু, আমি আসছি। সাথে সাথে তিনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়েছেন, দুর্বল হাত আমার দিকে বাড়িয়ে  দিয়েছেন। 

আমি হাতটা আমার হাতে ধরে আমার গালের ওপর রেখেছি, একটু আদর পাওয়ার লোভে। আমার আম্মুটা, আমার সোনামানিক আম্মুটা একটুখানি আদর করে দিয়েছেন। এটুকুইৃ। এই শেষবার। এরপর আর হাত উঠিয়ে আদর করে দেওয়ার শক্তি তার ছিল না।

আম্মুকে বলেছি- তুমি একটু শক্ত হও, দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। আম্মু চোখে পানি নিয়ে দুর্বলভাবে মাথা নেড়ে ‘না’ দেখিয়েছেন। হয়তো বুঝেছিলেন আর ফেরা হবে না। এরপরও দুই দিন তিনি ছিলেন। কিন্তু আর সেভাবে সাড়া দেননি। ওঈট/ঐউট-তে বারবার ঢোকা যায় না। আমি যখনই সুযোগ পেতাম গিয়েছি। কখনও চোখ বন্ধ করতেন না। তাকে ডাক দিলেই দেখতাম চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর ডাক দিলেই মনিটরে দেখতাম ধাই ধাই করে তার হার্টরেট বেড়ে যাচ্ছে। 

এ দেখে আমার মনে হতো, হয়তো আম্মু বুঝতে পারছেন। তাই আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম, আব্বু আর ফুপুর শেখানো দোয়া পড়তাম। আর তাকে গল্প শোনাতাম- আজকে কী হয়েছে, কে কী করেছে- এসব অর্থহীন কথা। জীবনের কত কথা শুধু আম্মুকেই বলতে পারতাম। আম্মুগো, এই কথাগুলো বলার মতো আর কেউ আমার থাকল না।

আরও পড়ুন: ভোরের আলো ফোটার আগেই একসঙ্গে ঝরল ৫ প্রাণ

শেষ দিন সকালে আম্মুকে দেখতে গিয়েছি। তার আর কোনো কষ্ট ছিল না সে সময়। কী যে ভালো লাগছিল আম্মুকে দেখে। আর দুপুরে একেবারে শেষ মুহূর্তে আম্মুর পাশে ছিলেন আমার আব্বু, যিনি নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে, জীবনের সব আয়োজন ফেলে টানা কয়েক বছর আম্মুর পাশে ছিলেন। আব্বু বলেছেন- তার চোখের সামনে, তার স্পর্শের ভেতরে, কলেমা-দোয়ার আওয়াজের ভেতরে- আম্মু খুব শান্তির মাঝে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেছেন। আম্মুও হয়তো এটাই চাইতো, তার প্রিয় মানুষটাকে আর নাহলে ছেলে-মেয়েকে।

আম্মু চলে যাওয়ার পর কত মানুষ যে দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে এসেছেন! সবাই কেঁদে কেঁদে বলেছেন, কীভাবে আম্মু তাদের উপকার করেছেন। এত এত মানুষকে তিনি তার মমত্ব দিয়ে স্পর্শ করেছেন, সেটা দেখে তীব্র কষ্টের ভেতরেও গর্ব অনুভব হয়েছে। ধন্যবাদ দিয়েছি স্রষ্টাকে যিনি এমন মায়ের গর্ভে আমাকে পাঠিয়েছেন। বিশুদ্ধ জীবন কী, আম্মু চলে যাওয়ার পর সেটা নতুন করে বুঝতে শিখছি।

প্রিয় বন্ধু-স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষী, আমি যদি আমার কোনো কাজ দিয়ে কখনও কারও সামান্য উপকারে এসে থাকি, যদি কারও মনে সামান্য আনন্দ দিয়ে থাকি, তারা আম্মুর জন্য দোয়া করে দিয়েন। আল্লাহ, তুমি আমার ভালো মানুষ আম্মুকে ওপারে ভালো রেখো। জান্নাতের বাগানে তাকে স্থান দিয়ো। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীর্।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence