শয়তানের প্ররোচনায় অতীতে বলেছি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন: মাসরুফ

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি

মাসরুফ হোসেন ও তার বাবা মোশাররফ হোসেন
মাসরুফ হোসেন ও তার বাবা মোশাররফ হোসেন  © সংগৃহীত

সাবেক বন সংরক্ষক মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে ১১২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে “ফ্ল্যাট, জমিসহ সম্পদ ১১২ কোটি টাকার: আরেক ‘বনখেকো’ মোশাররফ” শীর্ষক এক শিরোনামে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

জানা গেছে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা মোশাররফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ মাসরুফ হোসেনের বাবা। পুলিশের এ কর্মকর্তা ফেসবুকে চাকরি ও স্কলারশিপ ছাড়াও বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি বেশ পরিচিত। এদিকে তার বাবার এমন দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তুমুল সমালোচনায় পড়েন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

তার সঙ্গে ২০১০ সালের দিকে মহানবী মোহাম্মদ (স.) এর বিবাহ নিয়ে কটূক্তি করা একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে নেটিজেনদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। এর মধ্যে আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে জুমার নামাজের পর বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে পুলিশের এ কর্মকর্তার বহিষ্কার চেয়ে বিক্ষোভ করে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ।

বিষয়টি নিয়ে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্টে মাসরুফ হোসেন বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। ‘ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস বিষয়ক সর্বশেষ স্ট্যাটাস’ ক্যাপশন দিয়ে পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

শুরুতেই বলে নিচ্ছি, লোককে দেখিয়ে ধর্ম পালন করা আমার পছন্দের কাজ না। আমি কোনো ইসলামী স্কলার নই, কিন্তু যতদূর জানি, আল্লাহর সন্তুষ্টি না চেয়ে শুধুমাত্র লোক দেখিয়ে ধর্মকর্ম করা ইসলামে নিন্দনীয়। তাই নিজের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে এভাবে একাধিকবার লেখাটা আমার জন্য অশোভনীয়। তবুও আমি মনে করি, যাঁরা আমাকে ভালবাসেন (এর মধ্যে আমার পরিবার পরিজন আছেন), তাঁদের জন্য এবং আমার সকল মুসলমান ভাইবোনদের জন্য বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার।

বিশেষ করে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে আমার কিছু লেখা এবং স্ক্রিন শট দেখে আমার অনেক আপনজনও বিভ্রান্ত হয়েছেন। হাজার হাজার মুসলমান ভাইবোন কষ্ট পেয়েছেন, যেটা আমাকে ব্যাথিত করেছে। এছাড়াও সময়ে অসময়ে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আমি কখনো কখনো এমন কথা বলেছি যা বলা অনুচিত। 

আমার জীবন যাপনে অনেক দোষত্রুটি আছে। একজন প্রাকটিসিং মুসলিম যেভাবে জীবন যাপন করেন, আমি সেরকম জীবন যাপন এখনও করে উঠতে পারিনাই। ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলার এটাও একটা কারণ। 

তবে প্রশ্ন যখন উঠছে আমার ঈমান নিয়ে, আমি আবারও প্রকাশ্যে বলতে চাই,আমি একজন বিশ্বাসী মুসলিম। আমার চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে, আস্তে আস্তে আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আমি বুঝতে শিখছি। আমার ঈমান দুর্বল হতে পারে, আমি এটাও স্বীকার করি যে আমার অনেক দোষ ত্রুটি হয়তো আছে, তবুও আমি আল্লাহর রহমতে, তাঁর ক্ষমায় আস্থা রাখি। অতীতে আমি আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন এবং তাঁর রাসুল (স) এর অসম্মান হয় এমন যে কোনো কথাবার্তা শয়তানের প্ররোচনায় বলে থাকলে (অতীতে বলেছি এবং আল্লাহর কাছে এ নিয়ে আমি লজ্জিত) সেজন্য আল্লাহর কাছে গোপনে ক্ষমা চেয়েছি, আজ প্রকাশ্যে আল্লাহ পাকের দরবারে ক্ষমা চাইছি। আমার অতীতের আচরণে যদি কোনো মুসলিম ভাই বোন কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। 

আমি এবং আমার পরিবার একটি কঠিন সময় পার করছি। আমার পরিবারের বিরূদ্ধে অপপ্রচারের জবাবে আমাকে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে শক্তভাবে। আরেক দিকে আমার ঈমান আমল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আমি শেষবারের মত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমার যাবতীয় দোষ ত্রুটির জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের প্রতি আমি ক্ষমাপ্রার্থী। 

এ মুহূর্তে আমাকে এবং আমার পরিবারকে নিয়ে যে নোংরামি চলছে, এতে আমি এক বিন্দুও ভীত নই। আমি জানি, আল্লাহ আমাকে আর আমার পরিবারকে পরীক্ষা করছেন। তিনি চাইলে এ পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হবো ইনশাল্লাহ। আমার এ লড়াই অনেক কঠিন লড়াই, যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, আপনারা আমার আর আমার পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহ চাইলে এ লড়াইয়ে আমি জয়ী হবো, এটা আমার বিশ্বাস।


সর্বশেষ সংবাদ