ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিহাস

সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ
সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ  © সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের ফলে এগিয়ে আসছে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় রিমাল। রবিবার ( ২৬ মে ) বিকালে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনার মাঝামাঝি দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদগণ। কিন্তু কিভাবে হলো এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ? চলুন জেনে নেয়া যাক ঝড়ের নামকরণের আদ্যোপান্ত।

রিমাল আরবি শব্দ এর অর্থ বালু। নামটি ওমানের দেওয়া। তালিকা অনুযায়ী রিমালের পর আসবে পাকিস্তানের নামকরণে আসনা। তারপরের ঘূর্নিঝড়ের নামটি কাতারের দেওয়া, Dana বা ডানা

দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের জন্য ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের নামের তালিকা অনুযায়ী দ্বিতীয় কলাম চলছে। এই তালিকা ১৩টি দেশের নামের প্রস্তাব নিয়ে গঠিত হয়। দ্বিতীয় কলাম শেষ হলে তৃতীয় কলাম শুরু হবে। কলামের প্রথম নাম বাংলাদেশের। বাংলাদেশের দেওয়া সর্বশেষ নামটি ছিল বিপর্যয়। পরের নামটি অর্ণব।

কীভাবে এলো ঘূর্ণিঝড় নামকরণের এই ইতিহাস?

বেশিদিন আগের কথা নয়। ১৯৫৩ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর মায়ামির জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার আটলান্টিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের একটি ইউনিট ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা তৈরি করে।

ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিক্যাল ওয়েদার অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ২০০০ সালে এর সদস্য দেশগুলোর পরামর্শ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নাম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে, বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তানের মতো আরো ১২টি দেশকে সাথে নিয়ে। শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতও আছে এই তালিকায়।

পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নামকরণ করে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলো ঝড়ের নামকরণ করতে পারবে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডাব্লিউএমও) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় নামকরণের সামগ্রিক বিষয়। নামের ক্রম আসে দেশের ক্রম অনুযায়ী। অর্থাৎ দেশের নামের ইংরেজি বর্ণনানুক্রমে একটি করে দেশের নাম নির্ধারিত হয় আগত ঘূর্ণিঝড়ের নাম। ২০২০ সালে ১৩টি দেশ ১৩টি করে মোট ১৬৯টি নাম দেয়। দেশ ১৩টি হলো, বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।

নামকরণে পালনীয় শর্ত

ঝড় হলেও নাম খেয়ালখুশি মত দেয়া যাবেনা একেবারেই, পালন করতে হবে নির্দেশিকা।

একই নাম বারবার না দেয়া, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আদর্শে আঘাত হানতে পারে এবং বিশ্বের কোনো জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে আঘাত করে এমন নাম না দেয়া। নামের মাধ্যমে কোনো ধরনের নিষ্ঠুরতা, রুক্ষ ভাষা বা নির্মমতা প্রকাশ পাবে না। নামের উচ্চারণ হবে সহজ। নাম হবে সর্বোচ্চ আটটি বর্ণে, সাথে থাকতে হবে উচ্চারণ নির্দেশিকা। আবহাওয়াসংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনার পর নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।

কেনো দিতেই হবে ঝড়ের নাম?

ঝড়ের নাম দিলে যেমন কোন ঝড়ে কেমন ক্ষতি হয়েছে তা জানা যাবে বা কোনো গবেষণার প্রয়োজনে তথ্য ঘাঁটতে সুবিধা হবে তেমনি ঐ অঞ্চলে বসবাসকারীদের সতর্ক করে দিতে সহজ হয়।

নারীদের নামে নামকরণের আধিক্য কেন?

বিশ শতকের মাঝের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নাম বেশি ব্যবহৃত হতো। এ ক্ষেত্রে আবহাওয়াবিদদের যুক্তি ছিল, মেয়েদের নামগুলো মানুষ সহজে মনে রাখতে পারবেন। সে জন্যই নার্গিস, রেশমি, রিটা, বিজলি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, লুবান, তিতলি, নিলুফার, ক্যাটরিনাসহ অনেকগুলো ভয়ংকর ঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নামগুলো লিঙ্গ নিরপেক্ষ করার জন্য শর্ত দিয়ে দেয়।

সূত্র :

১. Tropical Cyclone Naming/World Meteorological Organization,

২. বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (https://bmd.gov.bd/)

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence