ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে স্কুলে স্বজনেরা

শিক্ষিকার লাশ নিয়ে স্বজনদের অবস্থান
শিক্ষিকার লাশ নিয়ে স্বজনদের অবস্থান  © সংগৃহীত

ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে এক শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে স্কুলে অবস্থান নেন স্বজনেরা। এ সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গিয়ে উত্তেজিত জনতার সামনে আগামী তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরে স্বজনেরা লাশ নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে দাফনের ব্যবস্থা করেন। 

সোমবার সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ ভোররাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত ওই শিক্ষিকার নাম রোকেয়া খাতুন। তিনি উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। ২০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেও বেতন পাননি তিনি। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছেন, রোকেয়া খাতুন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভূতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গাড়াবেড় গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত পাঠদান করিয়েছেন তিনি। কিন্তু বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় ঘুষ নিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু।

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম বলেন, ‘আমি নিজেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হিসেবে ঢুকেছিলাম। তখন বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয় প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। এরপর আমি সেখান থেকে সরে আসলেও আমার স্ত্রী থেকে যায়। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় চার লাখ টাকার মতো নেয় তারা। কিন্তু বেতন করে দেয়নি।’

আব্দুল করিম বলেন, ‘সর্বশেষ বেতন করে দেওয়ার কথা বলে ২০২২ সালে দুই লাখ টাকা চায়। সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে দেড় লাখ টাকায় মীমাংসা হয়। পরে আমি দেড় লাখ টাকা দিয়ে সভাপতি বাবলু চেয়ারম্যানের পায়ে পড়ি, স্ত্রীর বেতন করে দেওয়ার জন্য। সেই টাকাও বিফলে যায়। সব মিলিয়ে আমার কাছ থেকে সাত-আট লাখ টাকার মতো  নিয়েছে তারা। টাকার শোকে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারাই গেল। আমি ওই টাকা ফেরত চাই। সাথে এই দীর্ঘদিন যে পরিশ্রম করেছে তার ক্ষতিপূরণ চাই।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর ওঠাই। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় টাকাও নিয়েছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা রোকেয়ার চার লাখ টাকা ফেরত দেব।’ 

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলুও ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বেতন করে দেওয়ার কথা বলে আমরা যে টাকা নিয়েছি তার চার লাখ টাকা রোকেয়ার স্বজনদের কাছে ফেরত দেব। ইউএনও স্যার এসে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’ 

এ বিষয়ে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে যাই। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলি। তাঁরাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence