তাবলিগ জামাতের সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ AM , আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৪ AM
তাবলিগ জামাতের সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থি উভয় গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)-সহ সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীর বাটা রোডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আয়োজিত ‘গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত ফলোআপ সভায় তারা এ আহ্বান জানান।
আলোচনায় বিশ্ব ইজতেমা সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস, ওয়াসা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং তাবলিগ জামাতের সাদ ও জুবায়েরপন্থি উভয় অংশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তুতি সভায় বিশ্ব ইজতেমাকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচকরা সবাই তাবলিগ জামাতের সাদ ও জুবায়েরপন্থি উভয় অংশকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইজতেমা সম্পন্ন করতে পরামর্শ দেন।
নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত দুটি প্রধান গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে একটি অংশ দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারী। আরেকটি অংশ প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী। প্রায়ই এ দুই অংশের মধ্যে বিবাদ ও মারামারির খবর পাওয়া যায়। এমনকি গত রোববার (২১ জানুয়ারি) রাতেও রাজধানীর উত্তরার তাকওয়া মসজিদে অবস্থান করা নিয়ে দুপক্ষের অনুসারীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন মুসল্লি আহত হয়েছেন।
প্রস্তুতি সভায় সে প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়নি, তাই আমরা খুব কষ্ট পাই। আল্লাহর ঘরে (মসজিদ) গিয়ে আপনারা দখল-বেদখল করেন। এতে আমাদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়। আপনারা এক হলে ভালো লাগতো।
তিনি বলেন, তাই আমি, এই দুই গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাদের ধর্মমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনি দায়িত্ব নিয়ে দুইজনকে এক টেবিলে বসিয়ে এক প্লেটে খাওয়াতে পারেন কি না, তাহলে আমরা আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো।
তাকওয়া মসজিদের মারামারির ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতকাল দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। শুধু গতকালই নয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনা আপনারা ঘটান। আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো- আপনারা এমন ঘটনা আর ঘটাবেন না। আপনাদের উভয়পন্থিকে মিলেমিশে চলার অনুরোধ করছি। আল্লাহর দাওয়াত দেওয়ার শিক্ষা যেমন আপনারা দিচ্ছেন, তেমনভাবে মিলেমিশে চলার-থাকার শিক্ষাও আমাদের দিয়েন।
তিনি বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সব ঠিক আছে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা (২-৪ ফেব্রুয়ারি) জুবায়ের গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফা (৯-১১ ফেব্রুয়ারি) সাদ গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে।
জুবায়ের গ্রুপকে অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার যাতে ময়দানে কোনো ভাঙচুর না হয়। কোনো কিছু যাতে খোয়া না যায়। আপনাদের দাবি অনুযায়ী প্রতিবার প্রথম পর্ব আপনাদের দেওয়া হয়। সেই দাবি রক্ষা করে সম্মানের সঙ্গে অক্ষত অবস্থায় সাদ গ্রুপের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন। আমরা গতবারও শুনেছি আপনাদের লোকজন ভাঙচুর করেছে, এবার যাতে কোনো ভাঙচুর না হয়। মাঠ হস্তান্তরের বিষয় গোয়েন্দা বাহিনীরও অনুরোধ রয়েছে- আপনারা দুপুর পর্যন্ত সময় না গড়িয়ে সকাল থেকেই মাঠ হস্তান্তরের প্রচেষ্টা নেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমান আসেন। তাদের সঠিকভাবে সেবা করবেন। আর বিদেশি মেহমানদের জন্য ভিসা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এই বিশ্ব ইজতেমার জন্য। তাই আমরা চাই, এটি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে। প্রস্তুতির বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, দেখছি যে আয়োজন সু-সম্পন্ন। রাব্বুল আলামিন যদি সহায়তা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে পারবো।
সাদ-জুবায়েরপন্থিদের বিভেদ, মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমি নিজেই খুব লজ্জা পাচ্ছি। কারণ, ইজতেমার ময়দান অন্য গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের সময় ভাঙচুর করা, কারও মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করা বা কথা বলা, এসব শুনে আমি লজ্জিত। এমন ঘটনা আর ঘটবে না, এই প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ব ইজতেমা যাতে সফল হয় সেই আশা ব্যক্ত করছি।
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, অতীতে ইজতেমায় যেসব ভুল ত্রুটি ছিল সেগুলো শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দুই গ্রুপ হওয়ার কারণে আজকে অনেক অসংগতিপূর্ণ কাজ হচ্ছে। যা আমাদের অনেক কষ্ট দেয়। অতীতে যেমন হৃদ্যতা ছিল সেটা আবার দেখতে চাই। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো ত্রুটি যেন না থাকে সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাস্তায় হকারদের দৌরাত্ম্য বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার যাতে রাস্তায় কোনো হকারের দৌরাত্ম্য না থাকে।
আইজিপি বলেন, উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ইজতেমার একটি ভেন্যু করতে চান আপনারা। এ বিষয়ে অতীতের মিটিংয়ে মুরুব্বিরা বলেছিলেন। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আপনারা শুধু জানিয়েই সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছেন, এটা তো কোনো প্রক্রিয়া নয়। আমি মনে করি, যতক্ষণ আমরা কোনো ক্লিয়ারেন্স না দেবো, ততক্ষণ কাজ করবেন না। আর যদি সেখানে ভেন্যুর প্রস্তুতি কাজ করেন, তবে সেটা বন্ধ করতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা নেব।
আইজিপি আরও বলেন, এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে মাঠ হস্তান্তরের সময় ভাঙচুর করেন। এটা আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি না। আমরা আদব-লেবাস-তমিজ এগুলো তাবলিগে যারা আছেন আপনাদের কাছ থেকে শিখি। এখন গত রাতেও আপনাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে, এগুলো দেখে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কী শিখবে? আপনাদের কাছ থেকে আমরা আদব শিখে ভবিষ্যত প্রজন্মকে শেখাই, আর আপনারা যদি মারামারি করেন, তবে আমরা কী শিখবো এটা বলে যাবেন।